টেকেরহাটে প্রতিরোধ, গোপালগঞ্জ
এপ্রিলের শুরুতেই গোপালগঞ্জে পাকবাহিনীর আক্রমণ পরিচালিত হয়। এসময়ের ঘটনা জানা যায় মুকসুদপুর থানার বনিয়ারচর মিশনের ফাদার মারিনো রিগন এক্স-এর স্মৃতিকথায়- ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিলের কথা, যেদিন খুলনা থেকে লঞ্চযোগে শরণার্থীরা প্রাণভয়ে এদিকে আসছিল। এদিন একটি মজার ঘটনা ঘটল। সকালে পুলিশে-ভর্তি একটি লঞ্চ টেকেরহাট থেকে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের লঞ্চে কোনো পতাকা ছিল না। ছাত্রজনতার সেকি চিতকার- ভতসরনা! নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে লোকেরা লঞ্চের পতাকা তোলার দাবী জানাচ্ছিল। মনে আছে সেদিন ঐ লঞ্চে ব্যাবহারের জন্য আমরা যোগেশ বিশ্বাসের দোকান থেকে একটি পতাকা তাদের দিয়েছিলাম। পরের দিনটি একটি বিষাদময় করুণ দিন। এ দিনে আমাদের জাভেরিয়ান ফাদার মারিত্ত ভেরনেসি যশোরে দু’জন পাকসেনার হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। এ খবর অবশ্য আমরা পরে পেয়েছিলাম। প্রয়াত শ্রদ্ধেয় ফাদার মারিও বানিয়ারচর ধর্মপল্লীতে কাজ করেছিলেন। মানুষের জন্য ভালোবাসার কী অপূর্ব নিদর্শন! তার এই আত্মোৎসর্গ আমাকে নতুন শক্তি ও সাহস যোগাল। পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারদের থাবা থেকে রেহাই পেল না এ- অঞ্চল। দেশের মুক্তিবাহিনিও প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলল। ৫ এপ্রিল বানিয়ারচরের সামনে নদী দিয়ে কিছু মৃতদেহ ভেসে যাচ্ছিল। এগুলির মাঝে কয়েকটি ছিল মস্তকহীন। অনেকে বলাবলি করছিল পাঞ্জাবিরা পালিয়ে যাওয়ার পরে টেকেরহাটে ধৃত হয় এবং তাদের হত্যা করা হয়। ২২ এপ্রিল বেলা ২ টায় পাকিস্তানী ২টি জেট বিমান বানিয়ারচরে নদীর পাড়ে মেশিনগানের গুলি নিক্ষেপ করছিল। সবাই প্রাণভয়ে ছুটাছুটি করছিল সেদিন। গুলির আঘাতে পাঁচজন আহত হয়। তাদের একজনের অবস্থা ছিল খুবই গুরুতর। নদীতে নোঙর করা খ্রিস্টান মিশনের দুটি লঞ্চের মধ্যে একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেদিন ছিল জলিপাড়ের হাটবার কিনতি ভয়ে সেদিন হাট বসেনি।
[৬২৬] তপন বাগচী
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত