ঝলমলিয়ায় প্রতিরোধ, নাটোর
১১ এপ্রিল খবর পাওয়া যায় যে, পাকবাহিনী এক বিরাট দল নাটোরের দিকে এগিয়ে আসছে। এই বিশাল দলকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা আনসারদের ছিল না। তাই ঠিক হল, খুব ভোরে আনসাররা নাটর ছেড়ে ভারতে চলে যাবে। কাজ হল সেই মত। কিন্তু এই সময় ঘটে গেল এক দুঃসাহসিক ঘটনা। পাকবাহিনী নাটোর দখল করে রাজশাহীর দিকে এগোচ্ছে-এই খবর পেয়েছিলেন স্থানীয় প্লাটুন কমান্ডার তৈমুর। চৌদ্দ-পনের জন আনসার নিয়ে তিনি নাটোর-রাজশাহীর মাঝামাঝি ঝলমলিয়াতে গিয়ে পাকবাহিনীকে বাধা দেবার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। চৌদ্দ-পনের জন আনসারকে রাস্তার দু-ধারে বসিয়ে নিজে একটা থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে একটা উঁচু গাছের ওপর অবস্থান নেন। সকাল ৮-৯ টার দিকে পাকবাহিনীর বিরাট কনভয় ঝলমলিয়া অতিক্রম করার সময় লুকিয়ে থাকা আনসাররা গুলিবর্ষণ শুরু করে পাকসেনাদের ওপর। কিছুক্ষণ যুদ্ধ করার পর ৪ জন আনসার শহীদ হন। মারা যায় ৮-৯ জন পাক সেনা। কমান্ডার তৈমুরকে চারিদিক থেক ঘিরে ফেলে পাকবাহিনী। তৈমুরের সর্বশেষ গুলিটাও একজন পাকসেনার বুক ভেদ করে চলে যায় এবং আর গুলি না থাকায় বাধ্য হয়ে কমান্ডার তৈমুরকে আত্মসমর্পণ করতে হয়। পাকবাহিনী প্রথমে তাঁকে পাকিস্তান-জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতে বলে। তাঁর উত্তরে তিনি জয় বাংলা বলে ধ্বনি দেন। সাথে সাথে পাকবাহিনী গুলি করে কমান্ডার তৈমুরের ডান হাতটা গুঁড়িয়ে দেয়। পাক সেনারা তাঁকে নাটোর- রাজশাহী সড়কের ওপর চিৎ করে শুইয়ে ফেলে তাঁর দেহের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ‘পাকিস্তান-জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিতে দিতে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হয়। কমান্ডার তৈমুরের মতো অসংখ্য দেশপ্রেমিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বীরদর্পে প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু দেশপ্রেমের মর্যাদা এতোটুকু ক্ষুণ্ণ হতে দেন নি!
[৫৮৮] শাহানা আকতার মহুয়া
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত