You dont have javascript enabled! Please enable it!

জীবননগরেরে যুদ্ধ, চুয়াডাঙ্গা

জীবননগর ভারত সীমানা সংলগ্ন চুয়াডাঙ্গা জেলার একটি থানা। ভারতের কৃষ্ণনগর থেকে একটি সড়ক এই থানার উপর দিয়ে পূর্ব দিকে কোটচাঁদপুর হয়ে কালিগঞ্জের দিকে গেছে এবং অপর একটি সড়ক দর্শনা থেকে এই থানার উপর দিয়ে চৌগাছায় মিলিত হয়েছে। এর পূর্বদিকে দিয়ে ভৈরব নদ প্রবাহিত, যা পানিপথে দর্শনা থেকে যশোর পর্যন্ত চলাচল নিশ্চিত করে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে মুক্তিযুদ্ধকালে এই অঞ্চলের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। জীবননগর থানার যুদ্ধ-ছোট-বড় কয়েকটি যুদ্ধের সম্মিলিত ফল। নিন্মে তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের বর্ণনা দেওয়া হলঃ
ক. দত্তনগর কৃষিখামারের যুদ্ধঃ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা রাস্তার উভয় পাশে ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানী সৈন্য দত্তনগর কৃষিখামার এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। দত্তনগর কৃষিখামারের উত্তর-দক্ষিণ বরবার যে খালটি বিদ্যমান তার পশ্চিম পাড়ে অবস্থান নেয়। ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর হাবিলদার মহররম এক-দেড়শ’ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল নিয়ে দত্তনগর কৃষিখামার এলাকায় আক্রমণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হাবিলদার মহররম তাঁর দলকে দুইভাগে বিভক্ত করেন। ঐদিন বেলা ১১-টায় মুক্তিযোদ্ধারা দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে একসঙ্গে আক্রমণ চালায়। পাকবাহিনী তাঁর প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল গোলাগুলির পর পাকবাহিনী খালের পশ্চিমপাড় থেকে সরে এসে পূর্বপাড়ে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনী এসময় অগ্রসর হয়ে পশ্চিমপাড়ে এসে অবস্থান গ্রহণ করে এবং শত্রুবাহিনীর উপর হামলা অব্যাহত রাখে। সম্ভাব্য ২৭ তারিখ রাতে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুবাহিনীর ৩০/৪০ গজের মধ্যে ঢুকে পড়ে। ২৮ তারিখ দিন কোনো হামলা হয় নি। এ সময়ে মুক্তিবাহিণীর পক্ষ হতে কোনো সাড়া না পেয়ে ২৯ তারিখ সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান নির্ণইয়ের জন্য ৩ জন পাকসেনা মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের কাছে চলে আসলে ৩ জনই মুক্তিবাহিনী গুলিতে নিহত হয়। ফলে পাকবাহিনী কৃষিখামার এলাকা ত্যাগ করে জীবননগরের দিকে পালিয়ে যায়। ৩০ নভেম্বর টহলরত মুক্তিবাহিনী জানতে পারে পাকবাহিনী ফের কৃষিখামার এলাকা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এসংবাদে মুক্তিবাহিনী দত্তনগর হতে জীবননগরের দিকে ২/৩ কিলোমিটার অগ্রসর হয়ে অ্যাম্বুশ স্থাপন করে। ঐদিন রাত ১০-টায় পাকবাহিনী পুনরায় জীবননগর হতে দত্তনগর আক্রমণের চেষ্টা করলে মুক্তিবাহিনী অ্যাম্বুশে পড়ে। প্রায় ২৫ মিনিট গুলি বিনিময়ের পর পাকবাহিনী আবার জীবননগরে পশ্চাৎপসরণে বাধ্য হয়।
খ. জীবননগর যুদ্ধঃ জীবননগর থানা সদরের পশ্চিম ও উত্তর দিকে খাল বরাবর পাকবাহিনীর একটি শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল। দত্তনগর হতে ২৯ পাকবাহিনীর শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়। জীবননগর আক্রমণের জন্য মেজর আইকে বর্মা এবং মেজর আরকে মিত্র এক বিশাল বাহিনী নিয়ে প্রস্তুত হন।
পরিকল্পনা হয় যে, দুইজন জীবননগর শহরের দুইদিক থেকে আক্রমণ রচনা করবে। ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে তারা তাদের নিজ নিজ বাহিনী নিয়ে জীবননগর শহরের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হতে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ শুরু করে। মিত্রবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমনে পাকবাহিনী মাত্র ১৮ মিনিট প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। অবশেষে তারা খালিশপুরে পশ্চাৎপসরণ করে।
গ. খালিশপুরের যুদ্ধঃ জীবননগর পতনের পর পাকবাহিনী খালিশপুরে শক্ত প্রতিরক্ষা অবস্থান গড়ে তোলে। খালিশপুরে পাকবাহিনীর প্রায় ১৫০ জনের একটি কোম্পানি ভৈরব নদের পূর্ব পাড়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। মিত্রবাহিনী জীবননগর আক্রমণের পর সর্বশেষ শত্রু ঘাঁটি খালিশপুর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু পশ্চিম দিক হতে আক্রমণ করলে ভৈরব নদ পার হতে হবে এবং এটা হবে সম্মুখ আক্রমণ, তাই মিত্রবাহিনী উত্তর দিক হতে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ভৈরব নদ পার হয়ে খালিশপুরের উত্তর দিকে অবস্থান নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তর দিক হতে আক্রমণ পরিচালনা করে। হীন মনোবল শত্রুসেনারা মিত্রবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ আক্রমণে পরিচালনা করে। হীন মনোবল শত্রুসেনা মিত্রবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ আক্রমণে টিকে থাকতে না পেরে কালিগঞ্জ ও ঝিনাইদহএর দিকে পালিয়ে যায়।
[৫৭] ইকবাল জাফর খন্দকার

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!