You dont have javascript enabled! Please enable it!

জাতিসংঘ গ্যারেজ অপারেশন, চট্টগ্রাম

উনিশ’শ একাত্তর জাতিসংঘের ত্রান কাজে নিয়োজিত কর্মীরা তাদের নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে পারেনি। তখন জাতিসংঘ বাংলাদেশের অসহায় মানুষদের জন্য ত্রান ও যানবাহন পাঠিয়েছিল। কিন্ত জাতিসংঘের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মীরা তাদের নিরপেক্ষতা বর্জন করে পাখান্দারদের সহযোগিতা করছিল। জাতিসংঘের গাড়িতে চরে পাকহানাদাররা বাঙালীদের অত্যাচার করছিল শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে। নিরপেক্ষ জাতিসংঘ বাহিনীর এ আচরন দেখে ক্ষিপ্ত হলও মুক্তিযোদ্ধারা। তারা ঠিক করল পাকাবাহিনীর সহযোগিতা করার কারণে জাতিসংঘের কর্মীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে সময় খুজছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ইতিমধ্যে তিনি টার্গেট ঠিক করে ফেলেন। টার্গেট করেন সার্কিট হাউজের পেছনের মাঠে জাতিসংঘের যানবাহন গ্যারেজ।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ টার্গেট ঠিক করে রেকির কাজ শুরু করেন। প্রতিদিন তিনি সময় সুযোগমতো সেই গ্যারেজের আশে পাশে ঘুরে বেড়ান। পর্যবেক্ষণ করেন সার্বিক অবস্থা। রেকির কাজ শেষ করে তিনি তাঁর সতীর্থদের অপারেশন পরিকল্পনা জানালেন। সবাই আগ্রহী হলেন। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এক সন্ধ্যা। অপারেশন টার্গেট যাত্রা করলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জাকারিয়া, সেলিম উল্লাহ ও ফিরোজ আহমেদ। সাথে তারা বহন করেছেন প্রায় দু’রাউন্ড বিস্ফোরক। খুব গোপনে গ্যারেজের পাহারাদারদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করেন গ্যারেজ অভ্যন্তরে।
মুক্তিযোদ্ধারা যখন গ্যারেজ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিস্ফোরক বসাচ্ছিলেন তখন গ্যারেজের ক’জন ড্রাইভার তাদের দেখে ফেলে। চিৎকার দিয়ে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। চয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আসেনি। তাদের ক’জন পিছন দিয়ে দৌড়ে গিয়ে সার্কিট হাউজে খব দেয়। খবর পেয়ে পাকবাহিনিও সম্ভবতঃ দ্বিধা-দন্ধে পরে যায়। তাৎক্ষনিকভাবে তারা আসেনি। ততক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ফোরক বসিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়।
অনেকক্ষণ পর পাকবাহিনী এসে পুরো গ্যারেজের চারদিক ঘিরে ফেলে। তারপর চারদিকে চার্জ লাইট ফিট করে গ্যারেজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। গ্যারেজ তারা তন্ন তন্ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের খুজছে। কিন্ত তাদের পায়নি। পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপন করা বিস্ফোরক। সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের স্থাপন করা বিস্ফোরকগুলো নির্দিষ্ট সময় পরেও বিস্ফোরিত হয়নি। সম্ভবতঃ বিস্ফোরকগুলো শহরে প্রবেশ করার সময় বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পাকবাহিনী পরে এগুল অপাসারন করে। এ অপারেশন ব্যর্থ হলেও সফলতা এসেছে একদিকে থেকে। তা হল জাতিসংঘের ত্রান কর্মকর্তারা এরপর থেকে পাকবাহিনীকে তাদের যানবাহন ব্যবহার করতে দেয়নি। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিল মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষেপে গেলে তাদের ক্ষতি হবে। এরপর থেকে তারা পালন করেছিল নিরপেক্ষ ভূমিকা।
[৬৪৮] সাখওয়াত হোসেন মজনু

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!