জাহাজমারার যুদ্ধ, টাঙ্গাইল
পাকবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের ছাউনিতে প্রতিনিয়ত প্রয়োজনীয় অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিভিন্ন রসদ সরবরাহ করত। সাধারণত নৌপথে বিরাট চালান পৌছান যেত। এমনি অবস্থা ব্যাপক অস্ত্র, গোলাবারুদ নিয়ে ৭টি ছোট বর জাহাজ ঢাকা থেকে রওনা হয়। মুক্তিযোদ্ধা নেতৃত্বের আছে এ খবর পৌছে। ৯ আগস্ট ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে কালিহাতী থানার সিরজাকান্দি ঘাটে এই জাহাজগুলো এসে নোঙর করে। কোম্পানি কমান্ডার হাবিবুর রহমান সংবাদ প্রাপ্ত হন। তিনি নিজে এবং অনান্ন কয়েকজন চৌকস মুক্তিযোদ্ধা দারা রেকি কর্যে কিভাবে জাহাজ আক্রমণ করা যায় সেই পরিকল্পনা করতে থাকেন। অবশেষে ১২ আগস্ট হাবিবের নেতৃত্বে একদল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বিভিন্ন দিক থেকে জাহাজের অপর প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এই জাহাজ ২ টি সরে যাওয়ার সময় বালুর চরে গিয়ে আটকে যায়। দীর্ঘ সময় প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। অবশেষে জাহাজ দুইটি মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। খালাস করে দেখা যায় একুশ কোটি টাকার এক লক্ষ কুড়ি হাজার বাক্সে নানা ধরনের চাইনিজ, বৃটিশ ও মার্কিন অস্ত্র, গোলাবারুদ ছিল। এই যুদ্ধে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও সাতজন আহত হন। এই যুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম গৌরবপূর্ণ ইতিহাস
এই সাতটি জাহাজ কেনই বা এখানে এলো, নোঙর করলো। তারপর ৪ দিন এখানে থেকে গেল্। যে জায়গায় এই জাহাজগুলি নোঙর করে দীর্ঘদিন অবস্থান করলো এই সিরাজকান্দি গ্রাম কোন নগর, বন্দর বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। নিতান্তই অজপাড়া গায়ের নদীর অবহেলিত একটি ঘাট মাত্র। পরবর্তী সময়ে জাহাজ মারার পিছনে ইতিবৃত্ত যা জানা যায় তা হলো এমনঃ
জাহাজের সারেং চট্টগ্রামের জনৈক গোলাম মোস্তাফা। ২৫ মার্চ গোলাম মোস্তফা চালনা বন্দরে ছিল। বাঙালি হওয়ার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ জেটিতে নজরবন্দী রাখা হয়। ২৫ মার্চ রাতে পাকসেনারা গোলাম মোস্তফার ঘর-বাড়ী জালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। হত্যা করা হয় তাঁর নিকট আত্মীয়কে। প্রতিশোধের জিঘাংসায় তাঁর বড় ভাই ভারতে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিছুদিন চলে যায়। সারেং মোস্তফা তার আচরণে পাকিস্তানীদের পুনরায় আস্তাভাজন হয়ে উঠেন। আবার তাকে সারেং এর দায়িত্ব দিয়ে এই জাহাজে পাঠান হয়। তারপর গোলাম মোস্তফা অস্ত্র বোঝাই জাহাজগুলি নিয়ে এইসিরাজকান্দি গ্রামের পাশে নদীতে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পাঠান। আক্রমনে দেরী থাকায় তিনি জাহাজ নোঙর করে রাখেন। আবার আক্রান্ত জাহাজ বালুচরে ইচ্ছাকৃত ভাবে উঠিয়ে দেন। গোলাগুলির সময় সুযোগ বুঝে মোস্তফা নিজেই জাহাজে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানীদের বিরাট ক্ষতিসাধন করেন। গোলাম মোস্তাফার বিশস্ত বন্ধু মমতাজ খানের মাধ্যমে পত্র পাঠিয়ে জাহাজের গতিবিধি পূর্বেই মুক্তিযোদ্ধাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।
[৬২২] কে. এম আবদুস সালাম
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত