You dont have javascript enabled! Please enable it!

ছোটলেখা চা বাগান অপারেশন, সিলেট

যুদ্ধের দাবানল সর্বত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের মুহুর্মুহু আক্রমণ দেশের অভ্যন্তরে। ৪ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত আসেন পেঁচায় পাহাড় ক্যাম্প। ক্যাম্পটি ছোটলেখা বাগান থেকে অল্প কিছু দূরত্বে সীমান্ত বরাবর বি.এস.এফ ঘাটিতেই অবস্থিত। তিনি নির্দেশ দেন মুক্তিযোদ্ধাদেরকে দেশের ভেতরে প্রবেশ করে শাহবাজপুর থেকে কুলউড়া রেলপথ ও জুড়ির একটি সেতু ধ্বংস করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল করার। দায়িত্ব দেয়া হয় পেঁচার পাহাড় ক্যাম্পের জোয়ানদের। কমান্ডারদের দায়িত্ব বর্তায় সুলেমান আলীর (বর্তমান মৌলভীবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার) ওপর, সহযোগী কমান্ডারের দায়িত্ব পান সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ফখরুদ্দিন এ এনামুল হক। ২৮ জনের একটি দল রাইফেল, স্টেনগান, লাইট মেশিনগান, বেয়নেট ও গ্রেনেডসহ প্রচুর বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে পথপ্রদর্শকের ওপর ভরসা করে অগ্রসর হয়। রাত ৩টায় মুক্তিবাহিনীর দলটি ছোটলেখা চা বাগানে আসে। পরিকল্পনাকালে বাগানের ভেতরে আসার কথা না থাকলেও পথপ্রদর্শক দু’জন বাগানে নিয়ে এলে সন্দেহ বেড়ে যায়। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আগেই পাক আর্মিদের গুলি আসতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে লক্ষ্য করে। মুক্তিযোদ্ধারা মাটিতে শুয়ে পড়ে ক্রলিং করে পালাতে থাক। ফলে গ্রুপটি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। হানাদার বাহিনী পাল্টা গুলি আসছে না দেখে মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের সব মারা গেছে ভেবে আনন্দ করতে থাকে। রাত ৪টায় মুক্তিবাহিনী গ্রুপ একত্র হয়ে হানাদারদের ক্যাম্প নিকটবর্তী একটি সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নেয়। রাত সাড়ে চারটার পরে তারা অকস্মৎ আক্রমণ করে। অকস্মৎ আক্রমণের ফলে পাক আর্মি অসুবিধায় পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে মারা যায় ৫ জন পাক হানাদার এবং পোষ্য দালাল রাজাকার। ছোটলেখার গৌছ সর্দার মিছির আলী নামের কুলাঙ্গার খাগয়ালা বধ্যভূমিতে ঘোলষা গ্রামের ৫ জনসহ কত লোক হত্যা করিয়েছে আর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযান যে তারই মূর্ত প্রতিশোধ। ওই অপারেশনে পাঞ্জাবিরা ক্যাম্প ছেড়ে পালায়। মুক্তিযোদ্ধারা লাভ করে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র। পথপ্রদর্শক বিশ্বাসঘাতকতায় মনোবল হারাননি সুলেমান আলী। তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা প্রণয়েন অভিযান চালিয়ে সফল হন।
তাজুল মোহাম্মদের ‘সিলেটের যুদ্ধ কথা’ গ্রন্থের তথ্যে জানা যায়, ২৭ জুলাই ছোটলেখা যা বাগানে আরেকটি অপারেশন চালানো হয়। দলনেতা আজিজুল কামাল ও সহকারী মোসাব্বির বেগ, মনিউদ্দিন, আবদুল বারী, সুরুজ মিয়া, নিহারেন্দু ধর, বীরেন্দ্র কুমার দে, আবুল হোসেন, আহমেদ হুমায়ূন, ফয়সল আহমদ, হুসেন আলী, আমানউদ্দিন, শফিকুর রহমান, মনির উদ্দিন ও আবদুল মুকিত প্রমুখ অপারেশনে অংশ নেন। ২৬ জুলাই রওয়ানা হয়ে ২৭ জুলাই ভোর ৫টায় হায়েনাদের ঘাঁটির পাশে অবস্থান নিয়ে পরিকল্পনামাফিক শত্রুসেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে পাক সৈন্যদের ঘাঁটি তছনছ করে দেয়া হয়। কিন্তু পাকসেনাদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন গুরতর আহত হয়ে ৪ দিন চিকিৎসার পর মারা যান। পাঁচটি চায়নিজ রাইফেল মুক্তিবাহিনী লাভ করে।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!