You dont have javascript enabled! Please enable it!

চারান গ্রাম অ্যামবুশ, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে উত্তরে অবস্থিত কালিহাতি থানা। এ কালিহাতি থানাধীন একটি গ্রামেন নাম চারান। এ গ্রামে পাকিস্তানী তাঁদের দোসররা প্রায়ই আসত। জনগণের উপর নির্যাতন চালাত এবং বিভিন্ন মালামাল লুণ্ঠন করে নিয়ে যেত। মুক্তিযোদ্ধারা এ খবর পেয়ে পাকিস্তানী শত্রু ও রাজাকারদের অপকর্ম নিরোধ করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। ২২ শে মে দিন উপস্থিত হল। পাকিস্তানী সৈন্যর একটি প্লাটুন এ দিন চারান গ্রামে এসে লুটপাট করে এবং দশটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। শত্রুরা লুটপাট করে অপার আনন্দে কালিহাতির দিকে ফিরছিল। সংবাদ পেয়ে কাদের সিদ্দিকী শত্রু মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তার জন্য এটি এক সংকটময় সিদ্ধান। যদি এ হামলায় পরাজয় ঘটে তবে নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। বিশেষ করে যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে অযথা একটি গুলিও খরচ না করতে। কারণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের তখন দারুণ অভাব। সে জন্য কাদের সিদ্দিকী বাছাই করা ১০ জন বেপরোয়া ও দুঃসাহসী যোদ্ধা নিয় সড়কের পুলের আড়ালে ওৎ পেতে বসে থাকেন। পাকিস্তানী শত্রুরা কাদের সিদ্দিকীর নিশানার মধ্যে আস্তেই তার হাতের হাল্কা মেশিনগান গর্জে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে চারজন শত্রু সেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। শুরু হয় উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ।
দীর্ঘ চারঘন্টা স্থায়ী এ যুদ্ধে ১৩ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত ও বহু সৈন্য আহত হয়। শত্রু সেনারা এক বাক্স গুলি ও চারটি রাইফেল ফেলে পালিয়ে যায়। কাদের সিদ্দিকীর একক নেতৃত্বে এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলে মুক্তিবাহিনীর মনোবল বহুগুণ বেড়ে যায়। আরো নতুন নতুন জয়ের নেশায় তারা উন্মুখ হয়ে উঠে। পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে যেটুকু ভয় বা সংশয় ছিল টা কেটে যায় এবং কাদের সিদ্দিকীর প্রতি তাঁদের আস্তা বহুগুন বেড়ে যায়। জনসাধারণ এরপর থেকে এ বাহিনীকে কাদেরিয়া বাহিনী বলে আখ্যায়িত করে। প্রকৃতপক্ষে এখান থেকে শুরু হয় কাদেরিয়া বাহিনীর সফল জয়যাত্রা
২২ শে শত্রু সেনারা পরাস্ত হলেও পাকিস্তানী দোসর ও সহযোদ্ধা বাহিনী মিলিশিয়া ও রাজাকাররা প্রায়ি চারান গ্রামে প্রবেশ করতো। জনগণের উপর নির্যাতন চালাত এবং বিভিন্ন মালামাল লুণ্ঠন করে নিয়ে যেত। মুক্তিযোদ্ধারা এ খবর পেয়ে রাজাকারদের প্রতিহত করার প্রহর গুনতে থাকে।
২৩ শে অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের এমনি একটি সুযোগ পেয়ে যায়। পাকিস্তানীরা সাপ্তাহিক মেয়াদান্তে তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করার সময় রাজাকার মিলিশিয়াদের টহল জোরদার করতো। এদিন বল্লা পাক ঘাঁটি থেকে শত্রু স্থানান্তর হওয়ার প্রাক্কালে রাজাকার-মিলিশিয়ার একটি দল টহলরত ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত টহল দলের উপর আক্রমণ করে বসে। এ আক্রমণে বহু রাজাকার মিলিশিয়া হতাহত হয়। বিশদ জানা না গেলেও ২৩ শে অক্টোবরের আক্রমণের ফলাফল ছিল সুদূওরপ্রসারী। এ আক্রমণের পর থেকে চারান গ্রামের পাকিস্তানি সৈন্য, পাকিস্তানী দোসর সহযোদ্ধা বাহিনী মিলিশিয়া ও রাজাকাররা আর কোন নির্যাতন এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটায়নি।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!