You dont have javascript enabled! Please enable it! চানপুর অপারেশন, সুনামগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

চানপুর অপারেশন, সুনামগঞ্জ

চানপুর একটি পল্লী গ্রাম। ভারতীয় সীমান্তের রাস্তা বরাবর এ গ্রাম। ভারত থেকে দেশের ভিতরে ঢুকতে গানুরবা আশপাশের কোন এক এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা হয়। তাই কৌশলগত কারণে হানাদার বাহিনী একটি দল এখানে প্রেরণ করে। ৯০ সদস্য বিশিষ্ট হানাদার দলটি সমগ্র গ্রাম জুড়ে অবস্থান করছিল। এঁদের অবস্থানের সংবাদ সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়েও পৌঁছে।
ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টর ক্যাম্প। ৫নং সেক্টরের অধীনস্ত। এ সাব-সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন মেজর আখঞ্জী এবং সহকারী ছিলেন খুরশীদ আলম। সংবাদ পেয়েই ক্যাম্প কমান্ডার চানপুর আক্রমণের সিদ্ধান্ত করেন। এ সময়ে মুক্তিবাহিনীর একটি দল জুয়াই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে অস্ত্র হাতে নিয়ে এসেছেন ভোলাগঞ্জ ক্যাম্পে। দলটিকে ১৭ নং প্লাটুনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ দলটির উপর চানপুর অপারেশনের দায়িত্ব অর্পিত হয়। প্রবিত্রতম দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এলেন তারা। শুরু হল প্রস্তুতি। বিকাল ৩ টায় মুক্তিবাহিনী অসীম সাহসী যুবকেরা পৌছলেন চানপুর। গ্রাম তখন জনশূন্য। নিরীহ বাঙালী সবাই প্রায় ভয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।
একটি জনশূণ্য বাড়িতে অবস্থান গ্রহণ করেন তারা। প্রত্যেককে তখন যার যার আলাদা ডিউটি দেওয়া হলো। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা যারা যার অবস্থানে পজিশন নিয়ে সর্তক পাহারায় নিয়োজিত হলেন। দলনেতার নির্দেশ অনুযায়ী ঝোপ জঙ্গলে বসে অপেক্ষা করতে লাগলেন তারা। কোন শব্দ উচ্চারণ করা নিষেধ। বিড়ি সিগারেট টানলে বিপদ হতে পারে। তাই পাথরের মত বসে রইলেন সবাই। মশা হূল ফোটাতে লাগল অবিরাম। একটি মেয়েলোক গ্রামের ভিতর দিয়ে এগিয়ে এলেন। মুক্তি বাহিনীর অবস্থান জেনে নিতে পারে বিহায় তাঁকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। একটু পরেই শুরু হয় গোলাগুলি। আধ ঘণ্টা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা স্থান পরিবর্তন করেন। কিন্ত হান্দারদের প্রবেশ ঠেকানো এবং সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য কয়েক জন অবস্থান করতে লাগল বিভিন্ন স্থানে। এ রকম দায়িত্ব পালন কালে অনিল ছত্রী দেখতে পান ৪ জন পাকিস্তানী সেনা একেবারে তার কাছে এসে পড়েছে। অনিল প্রাণ রক্ষার্থে একটি পুকুরে নেমে মাথায় কচুরী পানা দিয়ে বসে থাকেন। এ অবস্থায় যুদ্ধ হয় দ্বিতীয় বার। এর স্থায়িত্ব অবশ্য ৫/৭ মিনিটের বেশি ছিল না। অনিল ছত্রী একটি এস, এল আর হাতে গর্তে বসে পাহারা দিচ্ছেন। তখন সন্ধ্যা হয় হয়। আর একটু পরই সমগ্র গ্রাম অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। এ সময় তিনজন হানাদার সৈন্য অনিল ছত্রীর বিপরীত দিকে যাচ্ছে একবারে কাছ দিয়ে ৫০/৬০ হাত দূর হবে হয় তো বা। মুহূর্তে কর্তব্য ঠিক করে নেন ছত্রী। চেপে ধরেন এস,এল, আর এর ট্রিগার। চোখের পলকে মাটিতে পড়ে গেল ৩ জন হানাদারের নিষ্প্রাণ দেহ। নিরব নিথর দেহের উপর ম্যাগাজিন খালি করে ফেলেন অনিল। নীরব চারদিকে। কোথাও প্রাণের স্পন্দন নেই। একটু পড়েন রাত হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা অনীল ছত্রী আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ক্যাম্পের দিক ঠিক করে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ অতিক্রম করে এক সময়য় তিনি পৌঁছালেন তার ক্যাম্পে। অন্যরা ইতিপূর্বে পৌঁছে গেছেন।
[৯৪] মোহাম্মদ আলী ইউনুস

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত