You dont have javascript enabled! Please enable it!

চান্দুরার যুদ্ধ, সরাইল ব্রাক্ষণবাড়িয়া

মুক্তিবাহিনী ক্রমাগত আক্রমণে পাকিস্তান্রা ক্রমশ পিছু হটতে থাকে। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইল থানার চান্দুরা ও মাধবপুরের মাঝামাঝি সড়কে মেজর সুবেদ আলী ভূঁইয়া তার বাহিনী নিয়ে অবস্থান করছিলেন, এসময় পাকিস্তান বাহিনীর একটি গাড়ি সিলেট থেকে মেজর সুবেদ আলী ভূঁইয়ার বাহিনীকে অতিক্রম করে চলে আসে। তখন সরাইল থানায় চান্দুরায় পৌঁছে লে.কর্নেল কে. এম সফিউল্লাহ নিজেদের গাড়ি মনে করা তা থামালেন। গাড়ি থামানোর পর দেখা গেল গাড়িতে পাকিস্তানী সৈনিক। লে.কর্নেল কে.এম. সফিউল্লাহ সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে বললে কেউ কেউ হাত উঠাল বটে, অন্যরা আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। গাড়ীর সামনে বসা পাঠান সুবেদার হঠাৎ লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সফিউল্লাহকে জাপটে ধরে ফেলে। এই সুযোগে পাকিস্তানী অন্য সেনারাও দ্রুত গাড়ি থেকে মেনে গুলি চালায়। মুক্তিবাহিনীর উপস্থিত ৮ জন সদস্য সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ চালায়। উভয় পক্ষের মধ্যে বেঁধে যায় তুমুল যুদ্ধ। এ সময় পাঠান সুবেদারের সঙ্গে লে.কর্নেল কে.এম. সফিউল্লাহর মল্ল যুদ্ধ শুরু হয়। সফিউল্লাহর দেহরক্ষী তাঁকে মুক্ত করার জন্য বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শত্রুকে গুলি করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এরই মধ্যে সফিউল্লাহর দেহরক্ষী শত্রুর গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সফিউল্লাহর সাথে পাঠান সুবেদারের মল্ল যুদ্ধ চলতেই থাকে। কোমর থেকে পিস্তল বের করার সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। অসিম সাহসিকতার সাথে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে পাঠান সুবেদারকে প্রচণ্ড ঘুসি মেরে মাটিতে ফেলে দেন। কিন্তু মাটিতে পরে গিয়েও পাঠান সুবেদার পরিত্যক্ত একটি স্টেনগান হাতে নিয়ে মেজর সফিউল্লাহর উপর গুলি চালায়। গুলিটি সফিউল্লাহ কোমরে লেগে তার কোমরের পিস্তলটি চূর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। তবে মেজর শফিউল্লাহ অক্ষত থেকে যান। তড়িৎ গতিতে তিনি শত্রুদের একজনের হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। এরই মধ্যে শত্রুবাহিনী আরেকটি গাড়ি সিলেটের দিক থেকে এগিয়ে আসে। সফিউল্লাহু তাঁদের উপর আক্রমণ করতে গিয়ে দেখেন তার হাতের অস্ত্রটি ভেঙে গেছে। এ অবস্থান তিনি অস্ত্র শূন্য হয়ে পড়েন। তার সঙ্গের প্রায় সকলেই কমবেশি আহত হয়েছিলেন। পরে তিনি আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এদিকে গুলির আওয়াজ শুনে মুক্তিবাহিনীর দুটি দল দুদিক থেকে এগিয়ে এসে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ শুরু করে। বেশ কিছু সময় ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত পাকবাহিনীর পরাজয় বরণ করে। এই যুদ্ধে শত্রুবাহিনীর ২৭ জন নিহত এবং ১৩ জন বন্দি হয়। মুক্তিবাহিনীর হাবিলদার রফিক ও সিপাহি মুজিবর রহমান শহীদ হন। মেজর নাসিম, ডা. লে. মইনুল, নায়েক মুস্তফা আলী, নায়েক মুরতজা, নায়েক আবুল কালাম আজাদ, সিপাহি মান্নান ও নায়েক কাদেরসহ ১১ জন আহত হন। ব্যাটালিয়ন-কমান্ডার মেজর নাসিম গুরুতর আহত হওয়ায় মেজর মতিনকে এই ব্যাটলিয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেজর নাসিমসহ অন্যান্য আহতদেরকে চিকিৎসার জন্য আগরতলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
[৫৭৪] মোঃ আবু মুসা

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!