You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.10 | চাঁদপুরে কিছু যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক

চাঁদপুরে কিছু যুদ্ধ
[অংশগ্রহণকারীর বিবরণ]

চাঁদপুরে আরো কিছু ছোট খাটো যুদ্ধের বিবরণ পাওয়া গেছে হাজীগঞ্জ থানার মুক্তিযোদ্ধা কালী নারায়ণ লোধের কাছ থেকে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকের ঘটনা, পাকবাহিনী হঠাৎ করে ২নং রাজার গাঁও ইউনিয়নের ফকির হাট বাজারে অতর্কিত হামলা করে তারা নিরীহ কয়েকজন দোকানদার মেরে ফেলে। তারা বাজার পুড়িয়ে দেয় এবং পাশেই রাধাশাই পাটোয়ারীর বাড়ি সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা এসে পাকবাহিনীর ওপর হামলা করলে প্রচণ্ড লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান (কাফাইকা) গুলিবিদ্ধ হন। পরে ডাঃ চন্দ্র মোহন লৌধ তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। আর একটি ঘটনা, বালিকা বাজারের পশ্চিম পাশে গোগরা ব্রীজে রাজাকাররা দিনরাত প্রহরা দিত। আমাদের কমান্ডার মুজিবের নেতৃত্বে একটি যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে আবদুল হান্নান, পূর্ণ লৌধ, সোলাইমান তালুকদার, মনিরুজ্জামান, দেলোয়ার হোসেন তালুকদার, শুকর আলম প্রমুখ। মুক্তিযোদ্ধা রাত তিন টার সময় নাছির কোট থেকে এসে তাদের অতর্কিত আক্রমণ করে। উভয়পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। পরে সেখানে কয়েক ট্রাক পাকসৈন্য এসে রাজাকারদের শক্তি বৃদ্ধি করে। জনগণের ক্ষতি এড়ানোর জন্য বাধ্য হয়ে পিছনে চলে আসে। পরে রাজাকাররা এসে পাশের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকেই পাকবাহিনী দুপুরবেলা বাকিলা চৌধুরীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পাকবাহিনী চৌধুরীর বাড়িতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে প্রথম গুলি করে পরে তাঁকে বেঁধে আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারে। তার নাম কালাই রায় চৌধুরী। ১০-১২-৭১, সময় সকাল ৭টা। পাকবাহিনী কুমিল্লা ক্যান্টম্যান্ট থেকে বের হয়ে খোদাই বিলের মাঝখান দিয়ে হেঁটে এসে কিত্তনখোলা লন্ডনী বাড়ির দিঘির পাড়ে উপস্থিত হয়। সাধারণ মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করে। পাকবাহিনী এসেছে। আমরা খবর পেয়ে পাকবাহিনীকে প্রতিহত করি। সেখানে পাকবাহিনীর গুলিতে অষ্টম শ্রেণীর একজন ছাত্র মারা যায়। এই যুদ্ধে একজন পাকবাহিনীও মারা যায়। সেখানে আহত অবস্থায় একজন পাক সেনাকে আমরা ধরে ফেলি। পরে তারা দিক পরিবর্তন করে মুখন্দসার চলে আসে। সেখানে প্রচণ্ড লড়াই হয়। আর একটি ঘটনা। ৭ই ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সাথে বলাখাল ওয়ারলেছের কাছে এক তুমুল লড়াই হয়। সেখানে একজন ভারতীয় ফৌজ নিহত হন। তাঁকে বলাখাল মাঠের হাইস্কুলের মাঠের এক কোনে দাফন করা হয়।
[৫০] ডা. মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত