You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.15 | চট্টগ্রাম সমুদ্র অভিযান - সংগ্রামের নোটবুক

চট্টগ্রাম সমুদ্র অভিযান

আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল নৌবাহিনীর চারটি গান বোটসহ অনেকগুলি টহল নৌযান। নৌবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন কমডোর মমতাজ ঘুপ, শতাধিক অফিসারের অধীনে ৬০০০ নাবিক ও ক্রু কর্মরত ছিল। এছাড়া বন্দরের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার জন্য ৯৭ পদাতিক ব্রিগেডের অতিরিক্ত ১ কোম্পানী সৈন্য বন্দরের পূর্ব ও পশ্চিমাংশে নিয়োজিত করা হয়। বন্দর এলাকায় রাখা হয় বেস কয়টি হেভী মেশিনগান ও বিমান বিধ্বংসী কামান। এই নিরিবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নৌ-কমান্ডোদের বিশাল অস্ত্রভাণ্ডারসহ শহরের মধ্য দিয়ে কর্ণফুলী অতিক্রম করে আনোয়ারা থানায় পৌঁছাতে হয়। সম্পূর্ণ অভিযান সত্যিই অভিনব এবং দুঃসাহসিক। অপারেশন জ্যাকপটের আওতায় ১৫ আগস্ট ’৭১ চট্টগ্রাম বন্দর অভিযানে যে বড় আকারের কমান্ডো দল তৈরি করা হয় তার দলনেতা মনোনীত হয়েছিলেন সাবমেরিন আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী বীর উত্তম। বৃহৎ সাফাল্যের কথা চিন্তা করে অপারেশনে স্বভাবতই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের চৌকশ কমান্ডোদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। একই সাথে এই অভিযানের সার্বিক গোপনীয়তা এবং পরিকল্পনা অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে নেওয়া হয়। মধ্য জুলাই থেকে বাংলাদেশের নদীবন্দরের অবস্থা, শত্রু সৈন্যের অবস্থান ও শক্তি, বন্দর অভিযানের পরিকল্পনা ও যোগাযোগ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ১নং সেক্টরের কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বীর উত্তর ও মিত্রবাহিনীর পূর্ব অঞ্চলের ডেলটা সেক্টরের কমান্ডার ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সাবেগ সিং। বাংলাদেশের নদী ও সমুদ্র বন্দরের টাইডাল চার্ট সংগ্রহ করা হয় চট্টগ্রাম বন্দরের তৎকালীন সচিব মিসবাহ উদ্দিন খানের মাধ্যমে। যুদ্ধে যোগদানকারী বন্দরের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ কামাল হোসেন এ ব্যাপারে মেজর রফিকুল ইসলামকে সহযোগিতা করেন। ২রা আগস্ট দুপুরে এ দলটি প্রথম চট্টগ্রামে উদ্দেশ্যে পলাশী প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ত্যাগ করে। দুপুর ১টায় ৬০ কমান্ডো সামরিক বাহিনীর ট্রাকে চেপে রাত নয়টা নাগাদ ব্যারাকপুর সেনানিবাসে এসে পৌঁছে। পরদিন দমদম বিমান ঘাঁটি থেকে বিমানে আগরতলা পৌঁছান। এখানে কমান্ডো দলকে অভ্যর্থনা জানান মেজর রায়। আগরতলা নিউক্যাম্পে দু’দিন রেখে কমান্ডোদের সকল রকম ব্রিফিং করেন সাবেগ সিং। পাশে থাকেন ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর হায়দার। মেজর রফিকুল ইসলাম হরিণা থেকে বন্দরের অপর পাড় চরলক্ষ্যা পর্যন্ত যাত্রার জন্য একাধিক সম্ভাব্য নিরাপদ রাস্তার সন্ধান রেখেছিলেন। হরিণা ক্যাম্প থেকে কমান্ডোরা তাঁদের প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জাম বুঝে নিয়ে ৬০ জন কমান্ডোকে তিনটি দলে ভাগ করে তিনজন উপ-দল নেতার অধীনে গাইডের সাহায্য নিয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরে অগ্রযাত্রা শুরু করেন। সমগ্র দলের নিরাপত্তা রক্ষার ভার দেওয়া হয় ক্যাপ্টেন মাহফুজকে। সাব্রুম সীমান্ত থেকে সারা রাত দীর্ঘ এবং ঝুঁকিপূর্ণ পথ পেয়ে হেঁটে ছাগলনাইয়া থানার জিনারহাট, রানাঘাট এবং ফাজিলপুর হয়ে মুহুরী নদীর তীরবর্তী কৃষ্ণমন্দার বাজার এলাকায় এসে পৌঁছেন। প্রত্যেকের পিঠে ২৫ কেজি ওজনের এক একটি বোঝা। রাতভর পাহাড়ি ও কর্দমাক্ত পথ চলে সকলেই ক্লান্ত কিন্তু শারিরীকভাবে সমর্থ কমান্ডোরা নুয়ে পড়েনি। কৃষ্ণমন্দার বাজার থেকে ইছাখালি পর্যন্ত নদীপথ অতিক্রম ছিল বিপদজনক। এই দূরত্বে দু’টি রাজাকার ঘাঁটি পাশ কাটিয়ে চলার সময় রাজাকার ঘাঁটি থেকে কমান্ডোদের নৌকার উপর অজস্র গুলিবর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু দূরত্ব বেশি হওয়াতে কমান্ডো বাহিত নৌকা গুলি যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা পায়। উত্তর ইছাখালীতে কমান্ডো রাজামিয়ার বাড়ি। সে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী মঙ্গল ভূঁইয়া, শাহ্‌ আলম কমান্ডোদের গোপন আশ্রয়, খাওয়া এবং সকল রকম সহযোগিতা করেন। শুভপুর ব্রীজ থেকে ২০ জন কমান্ডোর আর্মস ও এ্যামুনিশন বহন করে সাগরের তীর বেয়ে সাম্পানে ফৌজদারহাটের উদ্দেশ্যে নিয়ে যান পথ প্রদর্শক (গাইড) ভাটিয়ারির নূর মোহাম্মদ। এ গ্রুপের দলনেতা ছিলেন রাঙামাটির আব্দুর রশিদ। অপর দুটি দলের ৪০ জন কমান্ডো ডাঃ শাহ্‌ আলম বীর উত্তম ও মাযাহারউল্লাহ বীর উত্তম এবং নেতৃত্বে ১২ আগস্ট ঢাকা- চট্টগ্রাম সড়কের সন্নিকটে সমিতির হাটে পৌঁছে আত্মগোপন করে থাকে। ১৩ আগস্ট সকালে বাসদ নেতা ময়নুদ্দিন খান বাদল ও জানে আলম স্থানীয় বাজার থেকে পর্যাপ্ত তরিতরকারী ও ঝুড়ি খরিদ করে ঝুড়ির নিচে অর্ধেক পরিমাণ মাইন ও বিস্ফোরক রেখে উপরে শাকসবজি সাজিয়ে দারোগার হাট থেকে যাত্রীবাহী বাসে উঠিয়ে চট্টগ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। অবশিষ্ট মাইন জনাব জানে আলম এবং শাহজান বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পিক-আপ আর একটি বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করার গাড়িতে লুকিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও চট্টগ্রাম নিয়ে যান। কমান্ডো ২/৩ জনের পৃথক-পৃথক দলে যাত্রীবাহী বাসে চট্টগ্রামে পৌঁছে আগ্রাবাদে “মমতাজ মহলে”, সিডিএ মার্কেটের পাশে “কাকলী”. নামের বাড়িতে, এমপি ইসহাক সাহেবের বাড়ি, চকবাজারে কবির সওদাগরের বাড়ি সহ আরো কতিপয় আশ্রয়ে থাকার জন্য শাহীন বিরানী হাউসের মালিক জানে আলম ও এনায়েত মাওলা এবং তার স্ত্রী সর্বাত্মক ব্যবস্থা করেন। সবুজবাগের হাজীর হোটেলটি ছিল নৌ-কমান্ডোদের মিলন কেন্দ্র। নৌ-কমান্ডোদের ব্যবহারের মাইন ও যুদ্ধ সামগ্রী সমূহ রাখা হয় চক বাজারে কবির সওদাগরের বাড়িতে। ইঞ্জিনিয়ার আজিজুর রহমান এবং এনায়েত মাওলা গাড়ি দিয়ে নৌ কমান্ডোদের এবং অস্ত্রশস্ত্র পরিবহনে সাহায্য করেন। আবু তাহের, ডাঃ আজিজুর রহমান এবং তার স্ত্রী, নুরুল হুদা, মইনুদ্দিন খান বাদল বরের গাড়ি সাজিয়ে তাতে মাইন লুকিয়ে কর্ণফুলির অপরপাড়ে নিতে সাহায্য করেন। ডাঃ শাহ্‌ আলম বন্দরের সচিব, মিসবাহ উদ্দিন খানের ৫নং সরকারী বাংলোতে দু’দিন থেকে জনাব খানের সহযোগিতায় তাঁর গাড়িতেঃ (গাড়ি নং চট্টগ্রাম-৮৬৮৬) সমগ্র বন্দর এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন এবং দলনেতাকে অবগত করেন। শহরের অবস্থা তখন খুবই খারাপ। পথে পথে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের তল্লাশী, সন্দেহ হলেই গুলি। শহরে একটা গুমট থমথমে ভাব বিরাজ করছে। বাঙ্গালিরা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহির হয় না। শহরে কোনো যুবক ছেলেকে দেখা যায়না। এক মাঝ দিয়ে নৌ-কমান্ডোদের অগ্রাভিযান পরিকল্পিতভাবে অব্যহত থেকেছে। কমান্ডোদের সকলকে রাবেয়া ইঞ্জিনিয়ারিংসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনার জন্য যুদ্ধ পরিকল্পনাকারী দু’টি সংকেতিক গান বাজানোর কথা জানিয়ে দেন। গান শোনার জন্য প্রতি দলে ২/৩টি ১ ব্যান্ড রেডিও দিয়ে প্রতিদিন সকাল ৭-৩০ টায় আকাশবাণীর “খ” কেন্দ্র শোনার নির্দেশ দেয়া হয় এবং দলনেতাকে জানিয়ে দেয়া হয় পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া “আমি তোমার যত শুনিয়েছিলাম গান” এই গানটি শুনলে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং এরপর সন্ধ্যা মুখোপধ্যায় এর কণ্ঠে “ আমার পুতুল আজকে যাবে প্রথম শ্বশুর বাড়ি’ এ গানটি শুনলতে তাঁর ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করতে হবে। অপারেশনের সময় রাত ১২টা অর্থাৎ “০” আওয়ারের পর। আকাশবাণী “খ” কেন্দ্র থেকে প্রথম সাংকেতিক গানটি বাজে ১৩ আগস্ট সকাল ৭.৩০ মিনিট। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর অভিযানের জন্য সকল কমান্ডো শহরে সংকেত সঙ্গীত শোনার পর দলনেতার নির্দেশে স্থানীয় সাহায্যকারী ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন পথে নৌ-কমান্ডো এবং তাঁদের ব্যবহারের জন্য লিমপেট মাইনগুলি মাঝির ঘাট দিয়ে কর্ণফুলি নদী অতিক্রম করে চরলক্ষ্যার মোঃ ইউনুসের খামার বাড়ি, কালা মিয়া সওদাগরের বাড়ি, পটিয়ার চরে ফরিদের বাড়ি, ইব্রাহীম সওদাগরের খামার বাড়িতে পৌঁছে দেন। ২০জন কমান্ডো দল বন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। ১৫ আগস্ট, সকাল ৭.৩০ মিনিট, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এর কণ্ঠে দ্বিতীয় সঙ্গীতটি শোনার পর দুজন কমান্ডো সবজি বিক্রেতার ছদ্মবেশে কর্ণফুলীর বিপরীত তীর থেকে বন্দর এলাকা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে ফিরে আসেন। এবং সাথী যোদ্ধাদের সকলকে বন্দরের অবস্থা বুঝিয়ে বলেন। সকল প্রতীক্ষা ও প্রস্তুতির সমাপ্তি ঘটিয়ে ১৫ তারিখের সূর্য বিদায় নেয়। অন্ধকার নেমে আসে চরলক্ষ্যার খামার বাড়িতে। কমান্ডোরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। বন্দরে শত্রুপক্ষের অত্যধিক সতর্কবস্থা ব্যাখ্যা করার শেষ মূহুর্তে কয়েকজন কমান্ডো অভিযানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। ৩১ জন কমান্ডো সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনজনের মোট দশটি গ্রুপে কমান্ডোদের ভাগ করা হয়। বর্ষণ মুখর রাত। গাঢ় অন্ধকারে নিজের হাতও দেখা যায় না। কমান্ডোরা সন্তর্পণে এসে পৌঁছান। কর্ণফুলীর তীরে, বন্দরের বিপরীত পাড়ে। অনতিদূরে পাকসেনাদের বাঙ্কার। তাই সুচ পড়ার শব্দও হওয়ার উপায় নেই। নির্দিষ্ট ৩ জনের গ্রুপ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পায়ে ফিনস পরে গামছা দিয়ে মাইন বুকে বেঁধে নেন সকলে আর কোমরে গোজা একটি ড্যাগার। পরণে চুচকন সুইমিং কষ্টিউম। নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বন্দরের দুই মাইল স্থান জুড়ে জাহাজগুলি দাঁড়িয়ে আছে। তাই দূরের জাহাজের জন্য মনোনীত কমান্ডোদের অত্যন্ত তড়িৎ এবং সতর্ক হতে হবে। সমগ্র অপারেশনটি নীরব কিন্তু এত ভয়াবহ যে, মৃত্যু যে কোনো মুহুর্তে সম্মুখে এসে দাঁড়াতে পারে। আর এই নীরব এবং আত্মঘাতী অপারেশন সফল হলে শত্রুর জন্য বয়ে আনবে ভয়ংকর ধ্বংসযজ্ঞ। তাই কমান্ডোরা হয় নিজের মৃত্যু না হয় শত্রুর অনিবার্য ধ্বংস এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে তিনজনে হাতে হাত ধরে বুকে বিশাল ধ্বংসের উপযোগী তাজা একটি মাইন নিয়ে সন্তর্পণে পানির চীন দিয়ে কেবল নাকটি পানির উপরে রেখে চিৎ সাঁতার দিয়ে শত্রু জাহাজের দিকে এগিয়ে চলেন। টহল জাহাজগুলি তীব্র সার্চ লাইট জ্বেলে এদিক সেদিক যাতায়াত করছে। বন্দরের উভয় তীর থেকেও সার্চ লাইটের আলো ফেলে প্রহরীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছে। এর মাঝে কমান্ডোরা শত্রুর চোখকে ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যান যার যার নির্ধারতি টার্গেট। তিনজন কমান্ডো জাহাজের তিন স্থানে অবস্থান নিয়ে কোমর থেকে ড্যাগারটি হাতে নিয়ে পানির নিচে ডুব দেন। পাঁচ থেকে ছয় ফুট গভীর জাহাজের গায়ে শ্যাওলা পরিষ্কার করে পানির উপর চলে আসেন। এরপর কোমর থেকে গামছার গিট খুলে মাইনটি হাতে নিয়ে পুনরায় ডুব দিয়ে জাহাজের গায়ে হাত ঘষে পরিষ্কার করা স্থানটি খুঁজে সেখানে চুম্বকযুক্ত মাইনটি লাগিয়ে, মাইনের গায়ে সিলিন্ডারের মুখ রাবার ক্যাবটি খুলে, সেপটিপিন সরিয়ে বিস্ফোরোণের উপযোগী করে অতি সাবধানে পানির উপর ভেসে দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে পৌছানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কারণ ৪০/৪৫ মিনিটের মধ্যে এই মাইনের বিস্ফোরণ ঘটবে। সমগ্র বন্দরে ৩০ জন কমান্ডোর মাইন স্থাপনে আগপিছ হতে পারে, তাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে না পারলে আগের কমান্ডোর মাইনের বিস্ফোরণের আওতায় অন্যের মৃত্যু ঘটতে পারে। সার্বিক অপারেশন কার্যক্রমটি রোমাঞ্চপূর্ণ
রাত ২.১৫ মিনিট কানফাটা আওয়াজে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম কেঁপে উঠে। লোকজন ভয়ে শয্যা ছেড়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ে কিন্তু কি ঘটছে তা কেউ বলতে পারেনা এমনকি আক্রান্ত জাহাজগুলিও প্রথম কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। তাঁরা একটানা বিপদ সংকেত বাজিয়ে চলে। টহল জাহাজগুলি আক্রান্ত বুঝতে পেরে ভারী মেশিনগান ণৌ-কমান্ডোরা অনেক দূরে চলে গেছে। ১৫ আগস্ট রাতে চট্টগ্রামে বন্দরে ১০টি টার্গেট সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস ও নিমজ্জিত হয়। এদিনের ঘটনা সম্পর্কে ১৬ আগস্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তদন্ত রিপোর্ত লেখা হয়েছিল, “পরিস্থিতি পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে ক্ষয়ক্ষতি এবং হতাহতের ব্যাপারে জাহাজের কোনো ব্যক্তিকে দায়ী করা চলে না। কারণ পূর্ব থেকে কিছুই টের পাওয়া যায়নি এবং গেরিলারা যে এমন ধরনের অভিযান চালাতে পারে বা চালাবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। অবশ্য নদীর দিকটা ভালো করে দেখা শুনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দিন রাত্রির কোনো সময়েই কোনো সময়েই কোনো নৌকা ইত্যাদিকে আর জাহাজ গুলোর ত্রিসীমানায় ঘেষতে দেওয়া হচ্ছে না।”
[৪৫] কমান্ডো মোঃ খলিলুর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত