You dont have javascript enabled! Please enable it!

চন্দন্দিয়া অপারেশন-২, নরসিংদী
[অংশগ্রহণকারীর বর্ণনা ২]

চন্দনদিয়া ও তাঁর আশপাশের এলাকায় জামায়াত এবং মুসলিম লীগের তত্ত্বাবধানে রাজাকার-আলবদর বাহিনী, শান্তি কমিটি ইত্তাদির কার্যকলাপ চলছিল। পাক হানাদার বাহিনী প্রত্যক্ষ তুতাবধানে এরা মুক্তিজুদ্ধবিরধী প্রোপাগান্ডা এবং যাবতীয় কাজকর্ম চালাত। এরা পাকিস্তানের পক্ষে মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছিল। এই অবস্থায় এই এলাকার জনগণের মনোবল উজ্জীবিত করার মানসে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ মুক্তিযোদ্ধারা এই অঞ্চলে সমবেত হতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর এরুপ অবস্থানের বিষয় পাকবাহিনীর স্থানীয় দালালেরা তাঁদের নিকট তথ্য পাচার করে দেয়। আর তাই পাকবাহিনী চতুর্দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাও করে নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত হয়। সে অনুযায়ী এক রাতে সব দিক থেকে এরা আক্রমণ চালাবে এরূপ খবর পাওয়া যায়। এ খবর পেয়ে এদের মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এক এক দলকে অ্যাম্বুশ নিয়ে শত্রুকে প্রতিহতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। যেভাবে এই ব্যবস্থাটি করা হয় তা হলো; *শাসপুর পয়েন্টঃ আব্দুল মান্নান খানের নেতৃত্বে এক দল। * জাংগলিয়া বটগাছ পয়েন্টঃ আব্দুল বারী মৃধার নেতৃত্বে এক দল। *চন্দনদিয়া পুল পয়েন্টঃ মজনু মৃধার নেতৃত্বে এক দল। সারারাত অ্যাম্বুশ নিয়ে থেকে সকালে মনে করা হয় যে শত্রু বোধহয় আর এলো না। এরূপ ধারনার বশবর্তী হয়ে মজনু মৃধা ও আব্দুল আলী মৃধার দল যখন একটু ঢিলে দিয়েছে, তখন মান্নান খানের দলও মনে করল রাজাকার আলবদরপূর্ণ এই এলাকায় সকাল হওয়ার সাথে সাথে অ্যাম্বুশ বোধহয় ফাঁস হয়ে গেছে। অতএব শেষোক্ত দল অ্যাম্বুশ ছেড়ে দিল। আর সে সময়েই সকাল সাতটায় পাকবাহিনী দ্রুত অগ্রসর হয়ে সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে নোয়াদিয়া ও চন্দনদিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এর ফলে বেশ বেকায়দায় পড়েও মজনু মৃধার গ্রুপ অসীম সাহসে লড়ে যায়। তাঁরা গ্রুপের নজরুল এলএমজি ব্রাশফায়ার করে নিকটবর্তী অগ্রসরমান গাড়িবোঝাই শত্রুকে বিপর্যস্ত করে তোলে। পাকবাহিনীর গাড়ি উল্টে রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এরূপ অসীম সাহসের সাথে লড়েও অবস্থানগত বিপাকে পড়ে এবং কভারিং সুবিধার অভাবে মুক্তিবাহিনীকে পজিশন ত্যাগ করে পশ্চাৎপসরণ করতে হয়। তা সত্ত্বেও এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর সাতজন মারা যায়। পক্ষান্তরে অমিততেজী মুক্তিযোদ্ধা মানিক ও ইদ্রিস এই যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন এবং আমজাদ আহত হন। নজরুল (কামরাবো) পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকবাহিনী তাঁকে ‘মজনু মৃধা মনে করে’ উল্লাসিত হয়। উল্লেখযোগ্য যে, মজনু মৃধাসহ অপরাধপর কমান্ডারের নাম তখন পাকবাহিনীর মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করত। নজরুলকে ধরে তাই মজনু মৃধাকে ধরার আনন্দে ওরা মেতে উঠেছিল। কিন্তু পরে যখন ভুল বুঝল তখন সকল আনন্দ ফাঁপা বেলুনের মতো চুপসে গেল।
[১২৭] সিরাজ উদ্দীন সাথী

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!