You dont have javascript enabled! Please enable it! চন্দনাইশ থানার বলতলী ইউনিয়ন পরিষদ আক্রমণ, চট্টগ্রাম - সংগ্রামের নোটবুক

চন্দনাইশ থানার বলতলী ইউনিয়ন পরিষদ আক্রমণ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম জেলার সর্বদক্ষিণে চনদনাইশ ও আনোয়ারা থানা অবস্থিত। আনোয়ারা থানার তিতরী গ্রামে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ইনফরমার মারফত খবর পান একদল রাজাকার ও মিলিশিয়া সশস্ত্র অবস্থায় তাঁদের অবস্থানের দিকে এগিয়ে আসছে। তাঁদের উদ্দেশ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থাকা এলএমজি দখল করে যুদ্ধ সক্ষমতা হ্রাস করে। এ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস ও মঞ্জুর পরিকল্পনা করেন যে, রাজাকার ও মিলিশিয়াদের দলটিকে অ্যামবুশে ফেলে তাঁদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করতে হবে। তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা অনুয়ায়ী ১৬/১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার গ্রুপটি তিশরী গ্রাম থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে- এক ভাগ কমান্ডার ইদ্রিসের নেতৃত্বে, অন্য ভাগ মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরের নেতৃত্বে বরকল বাংলাবাজারের অবস্থান গ্রহণ করেন। রাজাকার ও মিলিশিয়াদের দলটি ওই স্থানে এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। রাজাকারদের দলটি আকস্মিক এই আক্রমণের মুখে পাল্টা গুলিবর্ষণ না করে দৌড়ে চন্দনাইশ থানার বলতলী ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিষ্ঠিত রাজাকার ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। মুক্তিবাহিনী তাঁদের পিছু ধাওয়া করে এসে ওই ইউনিয়ন পরিষদের পাশে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেন। এক ভাগ ইউনিয়ন পরিষদের পার্শ্বস্থ পুকুর পাড়ে, ওপর ভাগ পরিষদের সামনে ধানক্ষেতে অবস্থান নিয়ে কাল বিলম্ব না করে পরিষদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। পরিষদের ভেতর থেকে রাজাকাররাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। রাজাকারদের গুলিতে মুক্তিযোদ্ধা এস এম সবুর গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন। এভাবে অনেকক্ষন গোলাগুলি চলার পরে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি প্রায় নিঃশেষ হয়ে এলে এবং উল্লেখযোগ্য সাফাল্য পরিলক্ষিত না হওয়ায় তাঁরা স্বীয় অবস্থান ত্যাগ করেন। এই অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা একটি এলএমজি, দুইটি এসএমজি, দুইটি এসএমজি, তিনটি এসএলআর এবং ৫/৭ টি রাইফেল ব্যবহার করে। অন্যদিকে রাজাকার ও মিলিশিয়া গ্রুপটি তাঁদের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয় এবং তাঁদের মনে ভীতির সঞ্চারও হয়। উল্লেখ্য, এই অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল লক্ষ্য ছিল অ্যাম্বুশের মাধ্যমে রাজাকারদের যে দলটি তাঁদের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তাঁদের পরিকল্পনা নসাৎ করা। মুক্তিযোদ্ধারা সেই কাজে সম্পূর্ণ সফল হলেও পরবর্তী সময়ে তাঁদের ধাওয়া করে পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া শত্রুর শক্ত অবস্থানে আঘাত হানার প্রচেষ্টা ছিল তাঁদের আবেগ ও অদূরন্দর্শিতার পরিচায়ক।
[৫৯৭] কে.এম. আহসান কবীর

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত