চকবাজার সেনাজিপ অপারেশন, চট্টগ্রাম
চকবাজার চট্টগ্রাম শহরের একটি পরিচিত এলাকা। চকবাজারের দক্ষিনে-সিরাজউদৌলা রোড ও চট্টগ্রাম ও কলেজ, পূর্বে চট্টেশ্বরী রোড, পশ্চিমে বাকুলিয়া ও অন্যান্য এলাকা অবস্থিত। এই চকবাজারে ‘অপারেশন চকবাজার সেনাজিপ’ পরিচালিত হয়- যা ছিল চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথমদিকের এক গেরিলা অপারেশন। এ অপারেশন পরিচালনকারী মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমের মতে, ১৯৭১ সালের ১৮ মে সকাল ১০টায় তিনি এ অপারেশন পরিচালনা করেন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ‘হরিণা ট্রেনিং ক্যাম্পে’ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছে প্রতিদিন ৯তার গ্রুপের সকলেই০ আলাদাভাবে বের হতেন টার্গেট এর সন্ধানে। ১৮ মে সকালে তিনি এক টার্গেট নির্ণয় করতে সক্ষম হন। তখন তার পরনে ছিল লুঙ্গি ও গায়ে শার্ট। আর অস্ত্র হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ছিল একটি রিভলবার ও গ্রেনেড। তিনি টার্গেটকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে লেবারদের সাথে কথা বলতে থকেন। ইতোমধ্যে প্রতিদিনের ন্যায় একটি পাকআর্মি জীপ সেখানে এসে থামে। কাচাবাজার করতেই তাদের আসা। সে সময়য় এক পাকসেনারা কাছে কেবল অস্ত্র ছিল। জিপটি লালচান রোডের মাথায় পার্কিং করে অস্ত্রধারী সৈনিক একজন বাজারে প্রবেশ করে। আর চারজন পাকসেনা গাড়ির ভেতর গল্পরত। এমন সময় জাহাঙ্গীর আলম সামনে এগিয়ে সন্তর্পণে গ্রেনেডটি জিপের ভেতর নিক্ষেপ করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যান দক্ষিণ বাঁকলিয়ার নওশাদ নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। আর এদিকে ঐ বিস্ফোরণে জিপটি পুরোপুরি ধ্বংস হয় এবং চারজন পাকসেনা মারা যায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও বিবিসি থেকে এ অপারেশনের খবর প্রচার করা হয় বলে জাহাঙ্গীর আলম জানান। আপাত দৃষ্টিতে অপরিসীম। এ ঘটনার ফলে পাকসেনাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে এবং স্পষ্ট বুঝতে পারে প্রতিরোধ যুদ্ধে সাময়িক পিছুটান দিলেও মুক্তিযোদ্ধারা ফের সংগঠিত হচ্ছে। মুক্তিকামী জনগণের মনে এ অপারেশন আশার সঞ্চার করে এবং যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে উদ্ধুদ্ধ করে।
[৫৯৭] কে. এম. আহসান কবীর
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত