You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.15 | চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে অপারেশন - সংগ্রামের নোটবুক

চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে অপারেশন
(অংশগ্রহণকারী বিবরণ)

আমরা জানতে পারলাম মদুনা ঘাট বৈদ্যুতিক সাব স্টেশনের আলোর কারণে হাটহাজারী ও রাউজানের মুক্তিযোদ্ধারা মাদুনাঘাট ব্রিজ ও সাব স্টেশনে অপারেশন চালাতে পারছে না। তাই আমরা পরিকল্পনা করলাম বিদ্যুৎ সাপ্লাই লাইন বন্ধ করতে হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর পোমারা ইউনিয়নে কাপ্তাই সড়কের পাশে চন্দ্রঘোনা বিদ্যুৎ সাব স্টেশন হতে মদুনা ঘাট বিদ্যুৎ সাব স্টেশন লাইনের ৪টি বিদ্যুৎ খাম্বার ধ্বংস করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। আগেই রেকি করা ছিল। রাত ৭টার সময়য় বেতাগী বড়ুয়া পাড়া ক্যাম্প ত্যাগ করে দশটার সময় আমরা সত্যপীরের মাজারের মোড়ে কাপ্তাই রাস্তায় উপস্থিত হই। পূর্ব পশ্চিম রাস্তার উভয় পাশে আমরা অবস্থান গ্রহণ করি। আমি সর্ব পশ্চিমে ও আলম পূর্বের খাম্বার ধ্বংস করা দায়িত্ব নিই। অন্যরা মধ্যখানে। মোট ৮টি খাম্বা ধ্বংস করার টার্গেট করি। রাস্তার প্রান্তে এলএমিজি নিয়ে সুজন বড়ুয়া ও পূর্ব প্রান্তে আমিন শরিফ কাট অফ পার্টির দায়িত্বে অবস্থান নেয় যাতে চট্টগ্রাম ও কাপ্তাই থেকে আর্মি আস্তে না পারে। আনুমানিক রাত এগারটার সেফটি ফিউজে আগুন দিয়ে রাস্তার উত্তর পার্শ্বে ধানি জমিতে নিরাপদ দূরুত্বে অবস্থান করছি। আমার ডান পাশে দুই হাত দূরে সহযোদ্ধা সুজন বড়ুয়া এলএমিজি পজিশন নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের দিক তাক করে বসে আছে, কিছুক্ষণের মধ্যে ৮টি বিস্ফোরক এক সাথে ফুটে ৮টি খাম্বা ধ্বংস হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। পাশে অবস্থানরত সুজন বড়ুয়া সঙ্গে সঙ্গে কাত্রায়ে উঠল, গুলি লেগেছে তার উরুসন্ধিতে। হাত দিয়ে দেখি রক্তে ভিজে যাচ্ছে। খাম্বার ভাঙ্গা টুকরা ঊড়ে এসে প্রবেশ করেছে। দর দর করে রক্ত ভিজে যাচ্ছে। বেতাগী বড়ুয়া পাড়া ক্যাম্প থেকে আক্রমণ রচনা করেছি। আক্রমণ শেষে সে রাতেই আমাদের খীল্মোঘল চলে আসার কথা। সুজনকে বেতাগী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হলো একদল সহযোদ্ধাসহ। আমরা সে রাতেই গজারিয়া ক্যাম্পে চলে এলাম প্রায় পনের মাইল পায়ে হেঁটে। এ সময়ে আমাদের অশ্ত্রের পরিমাণ কমে আসে। বাইরে থেকে নতুন অশ্ত্রের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে। এখন বড় ধরনের আক্রমণ রচনার সময়। কিন্ত কি করা? হয়ত ভারতে গিয়ে গুলি গোলা সংগ্রহ করে আনতে হবে। নতুবা মরণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের ক্ষতি স্বীকার করে হলেও শত্রুর কাছ থেকে গুলি সংগ্রহ করতে হবে। গোলা বারুদ ও অস্ত্র সংগ্রহের জন্য আমরা খুবই উদগ্রিব হয়ে পড়লাম। রাজার হাট এলাকায় পিস্তল্ভরা একটি স্টিল পেটির খবর পাওয়া গেল। পেটি সংগ্রহ করা হলো। এ সকল পিস্তল বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে সূর্যসেন আমলে সরাজ আন্দোলনের। মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছিল। একপেটি পিস্তল পাওয়া গেলো। পিস্তলগুলি সম্পুর্ণ জং এ পরিণত হয়েছে। মেরামত করার বিন্দু মাত্র উপায় নেই। সব নিঃশেষ। সব দিক চিন্তা করে অবশেষ সিদ্ধান্ত হলো ২ জন সহযোদ্ধা নুরুন্নবী ও বাদলকে নিয়ে আমি ভারত যাব। নূরুল আলম অভ্যন্তরে যুদ্ধ পরিচালনা করবে।
[৮৭] মোঃ ছালেহ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত