You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.20 | গোয়ালমারীর যুদ্ধ, চাঁদপুর - সংগ্রামের নোটবুক

গোয়ালমারীর যুদ্ধ, চাঁদপুর

১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর চাঁদপুরের দাউদকান্দি থানার গোয়ালমারী নামক স্থানে তৎকালীন মতলব থানার এফ এফ কমান্ডার কবির আহমেদ খান ও বিমান সেনা কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ এর লোকজনের সাথে পাকবাহিনীর এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে প্রায় ৪০ জন পাক আর্মি খতম হয়। পাকবাহিনী দাউদকান্দি থেকে এসে খুব ভোর ঘুমন্ত মানুষের উপর এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ, লুটতরাজ ও বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়। তারা কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। তারা গোয়ালমারী জামালকান্দী ও সোনাকান্দা গ্রামের প্রায় সব কয়টি বাড়িতে আগুন ধরায়। পাকবাহিনীর আগম টের পেয়ে কালির বাজার, ষাটনল, হরিণা, কচুয়া ও তার আশেপাশের মুক্তিযোদ্ধারা বাড়িঘর ও গাছের আড়ে আড়ে একবারে পাকবাহিনীর কাছ থেকে আক্রমণ করে। দিনভর এই যুদ্ধের মাঝখানে বেলা ২টার সময়য় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সকল গোলাবারুদ শেষ হয়ে যায়। ঠিক ৩টার সপময় দূরদূরান্ত বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা এসে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমঙ্কে শক্তিশালী করে। পাকবাহিনী গোয়ালমারী বাজার ও ডিষ্ট্রিক বোর্ডের রাস্তায় সামনা সামনি অবস্থান নেয়। মাঝখানে ২৫ গজ ব্যবধানে একটি খাল, চতুর্দিকে অথই পানি। ২০ নভেম্বর সূর্য যতই পশ্চিমে হেলে যাচ্ছে পাক বাহিনীর লড়াইয়ের তীব্রতাও বাড়ছে। মাত্র ১টি এলএমজি, ১টি ২” মর্টার, ৩০টি এস এল আর বাকি ৩০৩ রাইফেল এর মাঝে প্রায় ৬০/৭০ জন পাকসেনা এসে তাদের শক্তিবৃদ্ধি করাতে আমরা চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিন্তু উইথড্র না করে অনড় লড়ে যাচ্ছি। যুদ্ধের এক সময়য় আমার সহযোদ্ধা প্রাক্তন এয়ারফোর্সের সদস্য সে উত্তেজিত হয়ে একটি খেজুর গাছের আড় থেকে অনবরত ফায়ার করছে আর পাকবাহিনীকে সারেন্ডার করতে বলছে। যুদ্ধ অবস্থায় একটি বুলেট তার ঘাড়ের নিচে পিঠ ভেদ করে বের হয়ে যায়। তার শরীর থেকে প্রচণ্ড রক্তপাত হচ্ছিল তাঁকে রক্ষা করতে দাউদকান্দি থানার গাজীপুরের রুহুল আমিন অসীম সাহসের সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকবাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, পরে সেও গুলিবিদ্ধ হয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তার মৃতদেহ ও কালির বাজারে পাঠানো হয়। রুহুল আইন চট্টগ্রাম এম.ই.এস কলেজের ছাত্র। তার নামে দাউদকান্দি শহীদ রুহুল আমিন সড়ক আছে। ওয়াদুদকে কালির বাজার প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর নিশ্চিন্তপুর জমিদার বাড়ি রেখে হাসপাতালের ডাক্তার দ্বারা পরে চিকিৎসা করানো হয়। হাজার হাজার গ্রামবাসী জানাজায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে শহীদ রুহুল আমিনকে হরিনা গোরস্তানে দাফন করা হয়। এই যুদ্ধে তাহের, রমিজ ও ওয়াদুদ সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে জানা যায়, এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতেও ভাসতে দেখা যায়।
[৫০] ডা. মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত