গোয়ালন্দে প্রতিরোধ যুদ্ধ
১০ই এপ্রিল মেজর আবু ওসমান আরিচা থেকে সংবাদ পান যে, একটি পাকিস্তানী ব্রিগেড নদী পাড়ি দেয়ার অভিযান যে কোনো মুহূর্তে শুরু করতে যাচ্ছে। গন্তব্যস্থল গোয়ালন্দ। এই রিভার ক্রসিং অপারেশনে রয়েছে লঞ্চ ও নৌকার একটি বহর। সংখ্যায় ২৫টি। সাথে দুটি গানবোট।
এ পরিস্থিতি নিয়ে মেজর আবু ওসমান চিন্তান্মিত হয়ে পড়েন। এখানে মোতায়েন করার মতো সৈন্য তার কাছে নেই। নভারনে অবস্থানরত প্রথম ইস্টবেঙ্গলকে সরিয়ে আনা যাচ্ছে না। চৌগাছা, মাগুরা, ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গা এলাকার প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে একটি করে ইপিআর কোম্পানীর মোতায়েন রয়েছে। এদেরকে অতিরিক্ত কয়াজ দেয়া যাচ্ছে না এবং গোয়ালন্দ ঘাটে অপারেশন পরিচালনা করার জন্যে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র এদের কাছে নেই।
মেজর আবু ওসমান তবুও একটি ঝুঁকি গ্রহণ করে। মাগুরা থেকে একটি প্ল্যাটুন নিয়ে এসে দুটি এলএমজি, একটি এমজি, একটি রকেট নিক্ষেপ এবং মর্টারসহ সজ্জিত করেন। প্ল্যাটুন কমান্ডার নায়েব সুবেদার শামসুল হককে পরামর্শ দেয়া হয় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং পুলিশ সংগ্রহ করে কুষ্টিয়ার মতো আজে লাগানোর জন্যে। শত্রুদের এ অভিযান যে কোনো মূল্যে প্রতিরোধ করার জন্যেও তিনি নির্দেশ দেন।
১২ই এপ্রিল সকালে পাকিস্তানবাহিনী বহর নজরে আসে। কূল থেকে ৩০০ গজ দূরত্বে থাকতেই আমাদের সৈন্যরা অতর্কিত হামলা চালায়। সৌভাগ্য বলতে হয়, আমাদের রকেট লাঞ্চার থেকে নিক্ষিপ্ত গোলায় প্রথম লঞ্চটি আঘাত পেয়ে ডুবে যেতে থাকে। এর ফলে পাকিস্তানী সৈনিকদের মধ্যে আতংকের সঞ্চার হয়। তাদের মনোবল ভেঙে পড়ে। পুরো বহরটি নদী তীরের দিকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ পরিস্থিতি শেষ অপরাহ্ন পর্যন্ত চলে।
অতঃপর গুলিবর্ষণ বন্ধ করে বহরটি উত্তর দিকে চলে যায়। মেজর ওসমান আগেই নগরবাড়িতে পাকিস্তানী সৈন্যদের সম্ভাব্য অবতরণ সম্পর্কে নওগাঁ ইপিআর উইং কমান্ডারকে অবহিত করেছিলেন।
যা হোক, শত্রুসৈন্যরা নগরবাড়ি ঘাটের দিকে মোড় নিয়ে সেখানে পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধাদের হটিয়ে দিয়ে তীরে অবতরণ করে। ভোরবেলা পাকিস্তানী ব্রিগেডটি রাজশাহীর দিকে এগোয়। এর একটি কলাম বা সামরিক বহর ঈশ্বরদীর দি থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ অতিক্রম করার জন্য ভিন্ন সড়কে মোড় নেয়।
সুবেদার মোজাফফররের নেতৃত্বে এক প্ল্যাটুন ইপিআর কুষ্টিয়ার দিক থেকে পাকিস্তানী সৈন্যদেরকে হামলা করে। কিন্তু প্রবল শক্তির সামনে কাবু হয়ে পড়ে। পাকিস্তানী সৈন্যদল ভেড়মারায় অগ্রসর হয়। কুষ্টিয়ার চারদিকে গড়ে তোলা রক্ষাব্যুহ ধ্বসে পড়ে। শত্রুসেনা ১৫ই এপ্রিল কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে।
এই দিনই মেজর ওসমান চুয়াডাঙ্গা থেকে তার সদর দপ্তর মেহেরপুর স্থানান্তর করে। তিন দিন পড়ে আরো পিছু সরে গিয়ে তিনি সীমান্ত পাড়ি দেন।
[৬৪৭] মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ, বীরউত্তম
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত