You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.24 | গৌড়পাড়ার যুদ্ধ, যশোর - সংগ্রামের নোটবুক

গৌড়পাড়ার যুদ্ধ, যশোর

বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিম সীমান্ত জেলা যশোরের শার্শা থানার নিজামপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে গৌড়পাড়া। গ্রামটির ঠিক মাঝামাঝি রাস্তায় বাজার। উত্তরে বেতনা নদী এবং মাইল ছ’য়েক দক্ষিণ দিয়ে গেছে বেনাপোল-নাভারণ সড়ক ও রেলপথ। আবার এই আলাকার পশ্চিমে রয়েছে রণকৌশল্গত দিক দিয়ে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সোনাদীয়া বাওড়। এই গৌড়পাড়াতে মুক্তিবাহিনী ১৯৭১ সালের পহেলা নভেম্বর পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে সমস্ত সহায়তা আসত মূলত যশোরের বেনাপোলস্থ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে। এছাড়া ১৮ এপ্রিল সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর সদর দপ্তর স্থানাতরিত হয়ে আসাসহ নানাবিধ কারণে শার্শায় সুদৃঢ় অবস্থান গড়ে তোলা শত্রুপক্ষ-পাকবাহিনীর জন্য জরুরি হয়ে পড়েছিল। এবং অপরদিকে মুক্তিবাহিনী তাদের অবস্থানকে জোরদার ও পাকবাহিনীর সকল আক্রমণকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করে তা ধরে রাখতে রণকৌশলগত কারণে অন্য অঞ্চল থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১৯৭১ সালের ২৪ অক্টোবর পাকবাহিনীর ৬০/৬৫ জন সৈন্য, এলএমজি, রাইফেল, ২/৩ ইঞ্চি মর্টার ও সিগন্যাল সরঞ্জামাদিসহ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গৌড়পাড়ার শার্শা সড়কের পূর্ব পাশে অবস্থান গ্রহণ করে। এবং তারা সোনাদীয়া বাঁওড় ঘিরে যে কাঁচা রাস্তাটি প্রধান সড়কের সঙ্গে মিলেছে সেই সংযোগস্থলে একটি এবং লক্ষণপুর গৌড়পাড়া সড়কের সংযোগস্থলে আরও একটি বাঙ্কার খনন করে। এদিকে মুক্তিসেনারা পাকবাহিনীর আগমন বুঝতে পেরে আরও সতর্ক হয়ে ওঠে। এসময় তারা একত্রিত হয়ে সোনাদিয়া বাঁওড়ের মাঝামাঝি দ্বীপে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকেই পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর নজরদারি করতে থাকে। মুক্তিবাহিনী অশ্ত্র ও গোলাবারুদের অপ্রতুলতার জন্য ২৪ অক্টোবরের পর থেকে প্রতিদিনই ‘হিট অ্যান্ড রান’ কৌশল অবলম্বন করে পাকসেনাদের অবস্থানকে নড়বরে করতে চেষ্টা করে যায়। এদিকে সোনাদিয়া বাঁওড় ও দীপ এবং তার আশপাশের এলাকার মুক্তিবাহিনীর অবস্থান বুঝতে পেরে ৩০ অক্টোবর থেকে পাকবাহিনী প্রচণ্ড শেলিং শুরু করে। পাশাপাশি নাভারণে অবস্থিত পাকবাহিনীর অবস্থান থেকেও মুক্তিবাহিনীর ওপর আর্টিলারি ফায়ার করা হয়। এ অবস্থায় মুক্তিবাহিনী টিকতে না পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে সাময়িকভাবে ওপারে চলে যায় এবং বয়রা সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদার সঙ্গে মিলিত হয়। ক্যাপ্টেন হুদা ৩১ অক্টোবর রাতে তাঁর নিজস্ব জনবল ও মুক্তিসেনাদের সমন্বয়ে গঠিত এক কোম্পানি পাস সেনা নিয়ে গৌড়পাড়ার পশ্চিমে লক্ষণপুর এলাকার তিনটি প্লাটুনে (ডান, মধ্য, বাম) বিভক্ত হয়ে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং রেকি শেষ করেন। ১ নভেম্বর ভোর ৫-টার দিকে ক্যাপ্টেন হুদার আদেশে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে। এ ধরনের আকস্মিক আক্রমণে পাকবাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং পাল্টা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ক্যাপ্টেন হুদা বয়রাতে অবস্থিত মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি ফায়ার সাপোর্ট চেয়ে পাঠান এবং তা পাওয়া যায় খুবই স্বল্প সময়ে। এদিকে উত্তর দিকের প্রধান সড়ক ব্লক করে দেওয়া হয় এবং সেখান থেকেও ফায়ার টিকতে না পেরে পাকবাহিনী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ২০/২৫ জন সৈন্য নিহত হয়।
[৫৭] ইকবাল জাফর খন্দকার

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত