গোকুলের অ্যামবুশ, জয়পুরহাট
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গোকুল ইউনিয়নের সরলপুর গ্রামে মুক্তিবাহিনী একটি শত্রুপক্ষের অগ্রাভিযানকে প্রতিহত করে। অতি অল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে একটি বিশাল শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মুক্তিবাহিনী গোকুলে এক দুঃসাহসিক ইতিহাসের সৃষ্টি করেছিল। সরলপুর গ্রামের ঈদগাহটি সেই ইতিহাসের সাক্ষার আজও বহন করে আসছে। গোকলুএর মধ্য নিয়ে যে সড়কটি চলে গেছে সেটি ছিল শত্রুবাহিনীর বগুড়ার সাথে যোগাযোগের একটি অন্যতম মাধ্যম। হিলি সীমান্ত থেকে গোকুলের ওপর দিয়েও পাকিস্তান বাহিনী বগুড়া প্রবেশ করত। তাই এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে মুক্তবাহিনী শত্রুর এই অগ্রাভিযানকে প্রতিহত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গোকুল ইউনিয়নের সরলপুর গ্রামে ১৯৭১-এর ১২ ডিসেম্বর প্রাণ বিসর্জন দিতে হয় হাফিজার ও বাবুল নামের দুই মুক্তিযোদ্ধাকে। মুক্তিবাহিনী ওই দিন অবস্থান করছিল সরলপুর গ্রাম থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে রজাকপুর নামের একটি গ্রামে। গোয়েন্দা সূত্রে তারা খবর পায় পাকবাহিনীর একটি বিশাল দল জয়পুরহাট নুনগুলার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই দল হিলি-জয়পুরহাট সীমান্তে মিত্রবাহিনীর হাতে পরাজিত হওয়ার পর পিছু হটে বগুড়া শহরে তাদের হেডকোয়ার্টারের উদ্দেশ্যে অগ্রাভিযান করছিল। মুক্তবাহিনী রজাকপুর থেকে বের হওয়ার পূর্বে তাদের একটি রেকি গ্রুপ পাঠায়। পাকবাহিনীর অগ্রগামী দলের সংখ্যা জানার জন্য রেকি গ্রুপের সংবাদ অনুযায়ী শত্রুর সংখ্যা দুই কোম্পানির অধিক হওয়ার মো. ইসরাইল হোসেন, এটিএম জাকারিয়া প্রমুখ কমান্ডার সিদ্ধান্ত নেন এত বিশাল বাহিনীর সাথে হালকা অস্ত্রে সজ্জিত তাদের এই ৫০-৬০ জনের দল পেরে উঠবে না, তাই পাকবাহিনী ছত্রভঙ্গ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পরিকল্পনা মোতাবেক মুক্তিবাহিনী বড়টেংরা গ্রামের উত্তর প্রধান সড়কের পেছনে বিভিন্ন বাঁশঝাড়ে অ্যাম্বুশ স্থাপন করে। পাকবাহিনীর বিশাল দলটি যখন তাদের অ্যাম্বুশ সাইটে প্রবেশ করে আনুমানিক দুপুর ১২.১৫ মিনিটে তখন মুক্তিবাহিনী তাদের কাছে থাকা এসএমজি, এসএলআর দিয়ে শত্রুর ওপর গুলিবর্ষণ করে। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানীরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু নিজস্ব বাহিনী সংখ্যায় কম হওয়ায় পাকবাহিনীর বেশিরভাগ অংশই নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে সক্ষম হয়। শুধু একটি মাত্র সেকশন অবস্থান নেয় ঈদগাহে। মুক্তিবাহিনী তাদেরও আক্রমণের চেষ্টা চালায়। তারা রাস্তা পার হয়ে ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে ক্রলিং করে উত্তর-পূর্ব দিক থেকেও আবারও গোলাবর্ষণ শুরু করে পাকবাহিনী ওপর। কিন্তু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মুক্তিযোদ্ধা হাফিজার এবং বাবুল। প্রায় ৪০ মিনিট গুলিবিনিময়ের পর অবশেষে পাকবাহিনী পালাতে বাধ্য হয়। তারা ছিন্ন-বিচ্ছিন্নভাবে সাদনা, রাজাপুর গ্রামগুলোর মধ্যে দিয়ে বগুড়া শহরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়।
[৫৯৬] রিয়াজ আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত