গোপালপুর থানা আক্রমণ
টাঙ্গাইল জেলার সর্ব উত্তরে জামালপুর জেলার দক্ষিনে-পূর্ব সীমান্তে গোপালপুর থানা। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পরজায়ক্রমে টাঙ্গাইলের সকল থানা দখল করার পরিকল্পনা অনুসারে ১৯ শে জুন সকাল ৭টায় গোপালপুর থানা দখলের উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধারা রওয়ানা দেয়। সকাল নয়টায় গোপালপুর থানার কাছাকাছি পৌঁছে দলটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দ্রুততার সাথে থানা ঘেরাও করে ফেল। পূর্ব দিকের দলটি প্রথম থানার উপর ফায়ার করে/ পুলিশরাও মুক্তিবাহিনীর উপর পাল্টা গুলি চালায়। কাদের সিদ্দিকী ২০ জন মুক্তিযোদ্ধার আরেকটি দল নিয়ে থানার ৭০/৮০ মিটার দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ করে। চতুর্দিক থেকে ঘেরাও হয়ে পড়েছে দেখে ৮ জন পুলিশ ও একজন এ এস আই অশ্ত্র মাটিতে ফেলে উপরে হাত তুলে দাঁড়িয়ে সারেন্ডারের কথা চিৎকার করে ঘোষণা দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা ত্বরিৎবেগ তাদের ঘিরে ফেলে।
কমান্ডার কাদের সিদ্দিকীর নির্দেশে আক্রমণ সফল হওয়ার সংকেত পেয়ে গোহাইল বাড়ির কাশেম বেরি-লাইট পিস্তল থেকে একটি সবুজ আলোর গুলি ছুড়ে। গোপালপুর শর সবুজ আলোতে আলোকিত হয়ে উঠে। সফলতার সংকেত পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা গোপালপুর থানায় ছুটে আসে। থানার পায়খানা থেকে গ্রেফতার হয় ধুরন্ধর সি আই মমতাজ আলী।
গোপালপুর থানা থেকে বেশি কিছু উদ্ধার হয়নি। ৬টি রাইফেল ও ৬০০০ গুলি ছাড়া থানায় আর কিছু পাওয়া যায়নি। তবে টাঙ্গাইলের সকল থানা দখল প্রক্রিয়ায় গোপালপুর থানা আক্রমণ ও দখল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সফল ঘটনা। হানাদার বাহিনী পরবর্তীতে থানা দখল করে স্বীয় অবস্থান শক্তিশালী করলে মুক্তিযোদ্ধারা থানা পুনরুদ্বারের লক্ষে ৭ই অক্টোবর গভীর রাতে শত্রুদের সাথে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কমান্ডার। হুমায়ূন, তারা ও বেনুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সারারাত এবং ৮ই অক্টোবর সারাদিন বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করলেও হানাদার ঘাঁটির সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে আক্রমণে সাহায্য করার জন্য হানাদারবাহিনীর তিনশ জন নিয়মিত সৈন্যের একটি দল গোপালপুরে এসে পৌঁছে। কমান্ডার হাকিমের নির্দেশে সম্মুখ যুদ্ধ পরিহার করে গোপালপুর থানাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখে সুযোগমতো চোরাগোপ্তা হামলার কৌশল গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। শহীদ ওরফে লালু, ভুলু ও অন্যান্য আনাচে-কানাচে গ্রেনেড নিক্ষেপে শত্রু সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়। থানা পুরুদ্ধার সম্ভব না হলেও শত্রুসেনারা থানায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গোপালপুর থানা অবরোধ কমান্ডার তারার কোম্পানি দুর্দান্ত সফলতা লাভ করে।
২৪ শে নভেম্বর গোপালপুরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনারা অতর্কিত আক্রমণের শিকার হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা গুলিবর্ষণ করেল পাক আক্রমণের তীব্রতায় পিছু হটতে বাধ্য হয়। অবস্থান পরিবর্তন করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হয়। এ যুদ্ধে আহাম্মদ আলী, আলাউদ্দিন, আমির আলী, গফুর খান, আব্দুল হাই, সিদ্দিকুর রহমান, আলী নেওয়াজ আবদুল খায়ের প্রমুখ অংশ গ্রহণ করেন।
দ্বিতীয় দফায় মুক্তিযোদ্ধারা গোপালপুর থানা দখলে ব্যর্থ হলেও হানাদার বাহিনীর স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘ্নিত হয়।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত