You dont have javascript enabled! Please enable it!

গেরিলা

‘গেরিলা’ ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে স্বাধীনতাকামী গোটা বাঙালি জনগোষ্ঠির প্রিয় শব্দ। এরা মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনীর মতো যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। অর্থাৎ সামনাসামনি লড়াই নয়। এঁদের যুদ্ধ-কৌশল ছিল ভিন্ন। নিয়মিত পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে এরা যুদ্ধ পরিচালনা করতো গণ-বাহিনীর চিরচারিত কৌশলে। স্বল্প ট্রেনিং- এ সমাজের সাধারণ স্তর থেকে উঠে আসা মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা গেরিলা নামে পরিচিত ছিলেন। তবে এ শব্দটি ছিল হানাদার পাকিস্তানী সৈন্য ও তাঁদের দেশীয় দালাল অর্থাৎ রাজাকার আল-বদরের জন্য ত্রাস। কারণ সামনাসামনি যুদ্ধে বাঙালি নিয়মিত বাহিনীর সাথে তারা পেরে উঠলেও অসামান্য সাহস ও কৌশলের অধিকারী গেরিলারা তাদের ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিল। মুক্তিযোদ্ধা সামরিক পরিচয়ে ‘এফএফ’ ও ‘এমএফ’ এই দুই নামে পরিচিত হতেন। সাধারণ ছাত্র-জনতার কাতার থেকে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তারা ছিলেন ‘এফএফ’ অর্থাৎ ‘ফ্রিডম ফাইটার’। বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও নিয়মিত বাহিনী থেকে যারা ছিলেন তাঁদের বলা হতো ‘এমএফ’, অর্থাৎ ‘মুক্তি ফৌজ’। গেরিলা বলা হতো মূলত ‘এফএফ’ কে, যারা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রাণবিন্দু। ছাত্রজনতা সমৃদ্ধ এই গেরিলারা জীবন বাজি রেখে দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানী স্থাপনা এবং হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে ‘হিট এন্ড রান’ লড়াই-এ নিয়োজিত ছিলেন। একের পর এক প্রাত্যহিক আক্রমণে তারা পাকিস্তানী সৈন্যদের নাস্তানাবুদ করেছেন। এ সব আক্রমণে অসংখ্য গেরিলা যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু তারা তাদের সাহস ও কৌশলে পাকিস্তানী নিয়মিত সৈন্যদের মনোবল ভেঙে দিতে পেরেছিলেন। গেরিলাদের ক্রমাগত আক্রমণে হানাদার সৈন্যরা সন্ধ্যার পর তাদের ক্যাম্প থেকে বাইরে বেরোতে সাহস পর্যন্ত হারিয়েছিল। এই গেরিলারা পাকিস্তানী সৈন্যদের চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করতো। ব্রিজ, কালভার্ট, ট্রেন উড়িয়ে দিত। শহর ও গ্রামঞ্চলের কোথাও পাকিস্তানীরা নিরাপদে চলাচল করতো পারতো না। প্রতি মুহূর্তে তারা গেরিলাদের আচমক্তা আক্রমণে সম্মুখীন হতো।
হারুন হাবীব

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!