You dont have javascript enabled! Please enable it!

গালিমপুরের যুদ্ধ, নবাবগঞ্জ ঢাকা

এই যুদ্ধ ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৬ (ছয়) দিন চলে। ২৩ সেপ্টেম্বরের নদী পথে ক্যাপ্টেন জাফরের নেতৃত্বে ১৫৫ জন পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী (এই লঞ্চে ক্যাপ্টেন জাফরের নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অফিসার নবাবগঞ্জের তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা সরেজেমিনে পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে সেখানে যাচ্ছিল)পয়েন্টার নামে একটি লঞ্চ ধাকা-লৌহজং-শ্রীনগর হয়ে হয়ে নবাবগঞ্জ থানা হেড কোয়ার্টারে যাবার পথে ২৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪.৩০ মিনিটে মুক্তিবাহিনী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হাতিয়ার চরে আটকা পড়ে যায়। (এই লঞ্চে পাক সৈন্যরা পথিমধ্যে ষোলঘর হাসাড়া থেকে বেশ কিছু জেলে ধরে এনেছিল) এবং সোনাহাজার অধিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আওয়াল সিকদারের প্রথম গুলির আঘাতেই ক্যাপ্টেন জাফর নিহত হয়। নিহত হওয়ার সময় ক্যাপ্টেন জাফর খান দূরবীন দিয়ে আশেপাশে দেখছিলেন। এই গৌরবময় কাজে আরও যারা যুক্ত ছিলেন তারা হলেন-বেনুখালী গ্রামের অধিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী খান আলম ও তার সঙ্গীরা যথা বেনুখালির মোহাম্মদ ইদ্রিস ও মুন্সিগঞ্জের মন্টু নামে একটি ছেলে। এ খবর প্রচারিত হয়ে যাবার পর ইছামতি নদীর দক্ষিণ পাড়ে হাবিলদার নাসির উদ্দিন খান ও ফ্লাইট সার্জেন্ট ওমর আলী নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেয় এবং জালালা, রফিক, শাকিল ও বাবনের নেতৃত্বে আরেকটি মুক্তিযোদ্ধার দল লঞ্চটির উত্তর দিকে অস্ত্রসহ অবস্থান নেয় এবং তিন দিকে থেকে পাকিস্তানী বাহিনীকে ঘেরাও করে ফেলা হয় এবং ২৪ সেপ্টেম্বর দিনটি কৌশলগত কারণে মাঝে মাঝে ফাঁকা গুলি করে অতিবাহিত করা হয়। অন্যদিকে পরিকল্পনা মোতাবেক ঐ দিন ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার কিছু আগে অসীম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন-অর-রশীদ ও জাহাঙ্গীর সাঁতরিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যবাহী লঞ্চটির নিকট পৌঁছে দুই পাউন্ড ওজনের পি.কে. এক্সপ্লুসিভ (ফসফরাস বোমা) মেরে লঞ্চটি আগুন লাগিয়ে দেয়। (এই বোমাটি সরবরাহ করেছিলেন জনাব আজিজুর রহমান ফকু)। এই ফসফরাস বোমার আঘাতে অধিকাংশ পাকিস্তানী সৈন্য ঘটনাস্থলে মারা যায় এবং কিছু সৈন্য নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আশে পাশের গ্রামগুলোতে লুকাতে চেষ্টা করে। এই সৈন্যদের কিছু অংশ শিবরামপুর গ্রামে ও কিছু অংশ পাশের গ্রাম ছাতিয়ার একটি ফাঁকা বাড়িতে অবস্থান নেয়। শিবরামপুরে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানী সৈন্যদের মারতে ২৫ সেপ্টেম্বর বেনুখালীর আবদুর রহিম যেতে সক্ষম হয়। (পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর বিপুল সংখ্যক পাক সৈন্যরা ভারি অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয় গালিমপুরে সংঘটিত যুদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করে যেতে সক্ষম হয়। এই যুদ্ধ এলাকা পরিদর্শনের সময় পাক সৈন্যরা গালিমপুর ও ছাতিয়া গ্রামে প্রায় দেড় শত বাড়ি ঘর ও অন্যান্য অবকাঠামো জ্বালিয়ে দেয় এবং ন্যাপনেতা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বাড়িতে একটি মর্টারের সেল নিক্ষেপ করে)। কিন্তু ব্রাহা খালের উত্তর দিকে রাখা বাকি দুইটি লঞ্চ ইতিমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা তলা ফুটো করে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। এ দু’টি লঞ্চের নাম ছিল যথাক্রমে-এম.এল. মীরা ও এম.এল. রিজিয়া খাতুন। ফলে পাকিস্তানী আর্মি উক্ত লঞ্চ দুইটি ব্যবহার করতে পারেনি। রণকৌশলের সুবিধার জন্যে এই দুইটি লঞ্চের একটি রিজিয়া খাতুনকে ব্রাহা খালের মুখে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে পরবর্তী সময় পাকিস্তানী বাহিনীর অন্য কোনো নৌযান খাল অতিক্রম করতে না পারে। এই কাজে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যবহার করেছিল দেশীয় ডা আর কুড়াল এবং এই কাজটি করেছিল কিশোর মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের মধ্যে যাঁদের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে তারা হলেন-মাসুদ, পল্টু তারা, হারুন, মোতাহার ও আরও কয়েকজন। এদের সবারই বাড়ি আগলা চৌকিঘাটা ও ব্রাহা এলাকায় এবং এরা সবাই ছিল ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী। এর পরপরই শুরু হয় পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ এলাকায় আরও প্রবলতর যুদ্ধের আয়োজন। নবাবগঞ্জ এলাকা থেকে পাকিস্তানী ফ্যাসিষ্ট সৈন্যদের না তাড়িয়ে দেয়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ক্ষান্ত হয়নি। এই যুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন এবং যাদের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা হলে- শওকত হোসেন আঙুর, মোহাম্মদ শাহজাহান, ও সিপাই মোহাম্মদ জসিম। বাকি ২৯ জনের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
[৬৯] হারুন-অর-রশিদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!