You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.09 | গজারিয়ার যুদ্ধ, মুন্সিগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

গজারিয়ার যুদ্ধ, মুন্সিগঞ্জ

মুন্সিগঞ্জ জেলার পূর্ব প্রান্তে মেঘনা নদীর দ্বারা বিচ্ছিন্ন থানা গজারিয়া। ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা যুদ্ধে এই থানা বাসীর রয়েছে অপরিসীম ত্যাগ ও গৌরব গাথা। ৯ মে ১৯৭১ পাকবাহিনী নৌপথে এসে গজারিয়া থানার গোশাইর চর, নয়ানগর, বালুচর, বাশগাও ও গজারিয়া গ্রামের নিরীহ ও নিরাপরাধ প্রায় ৩৬০ জন বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে। এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পর গ্রামগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে। লাশ সৎকারের মত কেউ ছিল না সেদিন। এই মর্মস্পর্শী বেদনায়ক ঘটনার পরে গজারিয়া থানার ছাত্র, যুবকেরা দল বেঁধে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে।
৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ আরো একটি হত্যাকাণ্ড চালানো হয় গজারিয়ার উপর দিয়ে ধাকা-চট্টগ্রাম সড়কের ভবেরচরের কাঠের ব্রিজের সন্নিকটে। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশে স্থানীয় জনগণ ভবেরচরের কাঠের পুল ভাঙতে থাকে। এ সময় হঠাৎ করে পাকবাহিনী আক্রমণ চালালে ১০ জন কিশোর শহীদ হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবার জন্য গজারিয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গজারিয়া থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নজরুল ইসলাম তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্যাংকারে আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ঠিক পূর্বের দিন অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের ফজলে এলাহি ও শ্রিনগরের কাজী আজিজুল হক (লেবু কাজী) এর নেতৃত্বে আধুনিক অশ্ত্রশশ্ত্র মুক্তিবাহিনীর একটি বড় গ্রুপ দাউদকান্দি হয়ে বাউশিয়া অতিক্রম করে। তাদের সাথে নজরুল ইসলাম যোগাযোগ করে যৌথভাবে পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিকল্পনা প্রস্তাব দেয়। ফজলে এলাহি, কাজি আজিজুল হক ও নজরুল ইসলাম পরিকল্পনা গ্রহণ করে ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধের কথাপ্রসঙ্গে তাদের সহযোদ্ধা মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ফজলে এলাহির সহায়তায় মেজর হায়দার ও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের মাধ্যমে ২টি এল এমজি, ১টি তিন ইঞ্চি মর্টার। ১৫টি রাইফেল, ৫টি এস এল আর, ৮টি এস এমজি ও প্রচুর গোলাবারুদ আমাদের দল লাভ করে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমরা কুমিল্লার উপর দিয়ে গজারিয়া থানায় চলে আসি। ভবেরচরের তৎকালীন পশু হাস্পাতালের ডাক্তার আমাদের নানাভাবে সহায়তা করেন। বাউশিয়া, ভাটারচর, মেঘনাঘাটে তখনো পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকারদের অবস্থান ছিল। খবর পেয়ে আমারা ওদের উপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করি। উভয় পক্ষে প্রচুর গুলি বিনিময় হয়। মর্টারের শেল বর্ষণের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের রক্ষাব্যুহ্য ভেঙে যায়। যুদ্ধ ক্ষেত্রের সে স্মৃতি মনে হলে দীর্ঘ ২৭ পর আজও দেহমনে বিশেষ শিহরণজাগে। এই যুদ্ধেই গজারিয়া মুক্তিযুদ্ধে কমান্ডার ও ছাত্রলীগ নেতা নজরুল শহীদ হন। তাঁকে নদীর পাড়ে ফেরিঘাটে সমাহিত করা হয়। পরের দিন সদলবলে আমরা বিক্রমপুরে চলে আসি। বিক্রমপুর তখন সম্পূর্ণ মুক্ত।
গজারিয়া থানার বাউশিয়া যুদ্ধের পার্শ্ববর্তী সকল গ্রামের জনসাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিকভাবে সহয়াতা করেছে। নিজেদের জীবনের ঝুকি নিয়ে তারা সিদ্ধ ডিম, দুধ ও অন্যান্য হালকা খাবার মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে তুলে দিয়েছে। যুদ্ধে পরাজয়ের আগে পাকিস্তানি বর্বর সৈন্যরা বালুয়াকান্দি গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
[৮৮] মোঃ জয়নাল আবেদীন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত