You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.09 | গাইবান্ধার বিজয় যুদ্ধ - সংগ্রামের নোটবুক

গাইবান্ধার বিজয় যুদ্ধ

গাইবান্ধার মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের কয়েক্মাস জেলায় অবস্থানরত পাকবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে অনবরত গেরিলা অপারেশন চালিয়ে তাঁদেরকে নাজেহাল করেছে। অসংখ্য রাজাকার ও পাকসেনা মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। কিন্ত পাকবাহিনীকে জেলা থেকে বিতাড়নের কাজটি করেছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী। ৯ ডিসেম্বর ভারতীয় ৩৪০ মাউন্ট বিগ্রেডের একটি অংশ সাদুল্লাপুর হয়ে গাইবান্ধা ও ফুলছড়ি দখল করে নেয় (৪ নম্বর মানচিত্রে উত্তরবঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ আক্রমণ রেখা দেখানো হয়েছে)। সেদিনই তাঁরা পলাশবাড়ী দখল করে। গোবিন্দগঞ্জের চূড়ান্ত বিজয় হয় ১১ ডিসেম্বরের বিকেলের দিকে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর গাইবান্ধা অভিযানটি উত্তরবঙ্গের বিস্তৃত রণাঙ্গনে যুদ্ধ পরিচালনার একটি অংশ ছিল। আগ্রহী পাঠকদের জন্য আমরা গাইবান্ধা জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের সামগ্রিক বিজয় পর্বের বর্ণনা মেজর নাসির উদ্দিনের লেখা থেকে এখানে উদ্ধৃত করছি… উত্তরবঙ্গের বিস্তৃত রণাঙ্গনে পাকিস্তানের ১৬ পদতিক ডিভিশনের অবস্থানেও ভিন্নতা ছিল না। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁ অক্ষে ভারতীয় ৭১ মাউন্টেন বিগ্রেড গ্রুপের চাপে সেখানকার প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত পাকিস্তানের ২৩ পদাতিক বিগ্রেডের মূল অংশ সৈয়দপুর-রংপুর অঞ্চলে এবং এর অপর অংশ দিনাজপুরের সরে পড়ে। তবে এ সময় তিস্তা পকেট পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়ে যায়, অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর-দিনাজপুরের উপরিভাগ থেকে পাকিস্তানীদের সমূলে উচ্ছেদ সম্ভব হয় এবং তা তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই। তবে তাদের দিনাজপুর-সৈয়দপুর-রংপুর সমান্তরাল প্রতিরক্ষা রেখা ভেদ করা ভারতীয় পক্ষে তখনো সম্ভব হয়ে উঠেনি। ৬ ডিসেম্বরের ৭১ মাউন্টেনের অগ্রবর্তী দল কান্তনগর সেতুর কাছে এসে থেমে পড়ে। এরপর ৯ ডিসেম্বর বিগ্রেড অধিনায়ক কাথাপালিয়া ১২ রাজপুতনা রাইফেলস’র দুটো পদাতিক কোম্পানিকে দিনাজপুর শহরের দিকে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। এই সেনাদলটি ১০ ডিসেম্বরের ভোরে প্রশস্ত ধিপা নদী অতিক্রম করে দিনাজপুর শহরের ৮ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে যায়। এখানে দিনাজপুরের শহরতলীতে পাকিস্তানী বাহিনী ভারতীয়দের মোকাবেলা করে। তীব্র প্রতিরোধের মুখে ভারতীয় বাহিনী পেছনে আবার কানত্নগর এলাকায় দিরে আসে। এই পর্যায়ে ৭১ মাউন্টেনের যুদ্ধ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হলো। এবার দিনাজপুরের পরিবর্তে সৈয়দপুর দখলে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বীরগঞ্জ থেকে সঞ্চালন ঘটিয়ে খানসামার দখল নেয় হবে এবং সেখান থেকে সৈয়দপুর। ১৩ ডিসেম্বর বিকেল নাগাদ সৈয়দপুরের নিকতবর্তী খানসামার দখল নিশ্চিত করতে সমর্থ হলো ৭১ মাউন্টেন।
ডা. মোঃ মাহবুবর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত