You dont have javascript enabled! Please enable it!

গঙ্গাসাগর উজানিসার যুদ্ধ, কুমিল্লা

গঙ্গাসাগর-উজানিসার ব্রিজটি কুমিল্লা জেলার সদর থানার অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ন ব্রিজ। এই ব্রিজের অপর দিয়ে পাকিস্তানি সেনারা যাতে সহজে চলাচল করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে আখাউড়া থেকে সুবেদার গোলাম আম্বিয়ার কমান্ডে রুই প্লাটুনের একটি দল উজানিসার এবং অপরটি গঙ্গাসাগর নামক স্থানে ডিফেন্স নেয়। ইপিআর ও স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত এই দলটি মেজর হায়দারের নেতৃত্বে গঙ্গাসাগর সেতুটি ধ্বংস করে দিয়ে বাঙ্কার প্রস্তুত করে শত্রুর অপেক্ষায় বসে থাকে। উল্লেখ্য, বাঙ্কার প্রস্তুত্তে স্থানীয় সাধারণ জনগণ কোদাল, খস্তা ইত্যাদি দেশীয় গৃহস্থলি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে স্বউদ্যোগে বাঙ্কার খননে সহায়তা প্রদান করেন। উজানিসার এবং গঙ্গাপসাগর থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় স্থাপিত ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে টেলিফো যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
মেজর খালেদ মোশররফের নির্দেশে ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন সুবেদার গোলাম আম্বিয়াকে সব রকমের সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। উজানিসারে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভারী অস্ত্র বলতে ছিল একটি মাত্র মেশিনগান। অবশিষ্ট ৩০৩ রাইফেল আর কিছু এলএমজি। এদিকে পাকিস্তানী বিমানবাহিনী ২ এপ্রিল থেকে উজানিসারে, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, গঙ্গাসাগর ইত্যাদি স্থানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপক হামলা চালাতে থাকে।
১৪ এপ্রিল বিকেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি ব্রিগেড কুমিল্লা থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার পথে উজানিসার সেতুর প্রায় দেড় মাইল দূরে কনভয়ের সমস্ত গাড়ি থামিয়ে ২টি কোম্পানি দুদিক দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। সৈন্যদের সাথে দুইজন অফিসারও ছিলেন। সন্ধ্যার কিছু পূর্বে কোম্পানি দুটি বিনা বাধায় ঢিলার উপরে উঠে একত্রে হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আগে থেকেই ওঁৎ পেতে বসে পাকিস্তানি সেনাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। তাই অতর্কিতে ইপিআর সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধারা মেশিনগান, এলএমজি আর রাইফেলের গুলি একস্তাহে হায়নাদার ওপর ছুঁড়তে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং এদিক ওদিক পালাতে থাকে। নিরুপায় হয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পিছু হটতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, এখানে প্রায় ১৫০ জনের মতো পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। ঐ তারিখেই হানাদার বাহিনীর অপর একটি দল গঙ্গাসাগর হয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। পাকিস্তানি সেনারা জানত না যে, ইপিআর বাহিনীর একটি দল তাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। ইপিআর বাহিনীর এই দলটি অগ্রসরমান পাকিস্তানি সৈনিকদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে বেশ কিছু পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক আর্টিলারির গোলাতে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। টেলিযোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ইপিআর বাহিনী বিভিন্ন স্থানে বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে থাকে। কোন দিক থেকে কোন প্রকা সাহায্য না পেয়ে সুবেদার গোলাম আম্বিয়া তার দুটি প্লাটুন নিয়ে শত্রুর গোলাবৃষ্টির মধ্যেই পিছু হটে ১৬ এপ্রিল ১২টার সময় আখাউড়া পৌঁছতে সক্ষম হন। হটে আসার সময় সুবেদার গোলাম আম্বিয়া গঙ্গাসাগরে অবস্থানরত ইপিআর প্লাটুনকে কোনো রকম সংবাদও দিতে পারেননি।
এদিকে ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী মরিয়া হয়ে গঙ্গাসাগর সেতু পার হওয়ার চেষ্টা করে ইপিআর প্লাটুন নায়েক সুবেদার আসাদুর আলী ওঁ নায়েক সুবেদার মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের অবস্থানে টিকে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। ১৮ এপিল ইপিআর বাহিনীর এই দলটিও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে বিচ্ছন্ন হয়ে যায়। উল্লেখ্য, তুলনামূলকভাবে সংখ্যায় কম ও সাধারণ অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে স্থানীয় জনগণের সার্বিক সহায়তায় ইপিআর সদস্যরা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করে রাখতে অসীম সাহসের পরিচয় দেন।
[৫৯৫] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!