খানজিয়া বিওপি’র যুদ্ধ, সাতক্ষীরা
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তরেখা দিয়ে প্রবাহমান ইছামতি নদীর পূর্ব তীরের ‘খানজিয়া বিওপি’ সাতক্ষীরা শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে অবস্থিত। ইছামতির পশ্চিম তীর ভারতের টাকিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সমতল থেকে বিওপি’টি ১০/২০ ফুট উঁচুতে হওয়াতে রণকৌশল্গত দিক দিয়ে এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
১৯৭১ সালের জুলাই-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে মেজর জলিলিএর নির্দেশ ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা ১৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পাকবাহিনীর ঘাঁটি খানজিয়া বিওপি আক্রমণ করেন। অবশ্য এর দু’তিন দিন পূর্বে মেজর জলিলের নেতৃত্বে পরিকল্পনা গ্রহণ, রেকি করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ইছামতি নদী পাড়ি দেওয়া এবং খানজিয়া বিওপির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সে সময় সেখানে পাকসেনাদের শক্তি ছিল দুই প্লাটুন এবং তারা বিওপি’র চারদিকে ৩/৪ ফুট উঁচু এবং ২/৩ ফুট পুরু মাটির ঢিবি ক্ষুদ্রান্ত ফায়ায়ের প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আক্রমণের দিন সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা টাকি হাতে ইছামতি পাড় হয়ে দেবহাটা-দাদপুর হয়ে রাত ১০টার দিকে খানজিয়া প্রাইমারি স্কুল এলাকাতে সমবেত হয়। সেখানে দলটি তিনভাগে বিভক্ত করা হয়। এর দু’টি অ্যাকশন পার্টি এবং একটি কাট অফ পার্টি। ডান দিকের অ্যাকশন পার্টির কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন হুদা নিজে ও বাম দিকের অ্যাকশন পার্টির কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট বেগ। আর হাবিলদার সোবহান ছিলেন কাট অফ পার্টির দায়িত্বে। কাট অফ পার্টি অবস্থান নেয় খানজিয়া মসজিদে এবং নায়েব সুবেদার গফুর ৩ ইঞ্চি মর্টার নিয়ে খানজিয়া বাজারে অবস্থান গ্রহণ করে। প্রথম নায়েব সুবেদার গফুর ৩ ইঞ্চি মর্টার নিয়ে খানজিয়া বাজারে অবস্থান গ্রহণ। প্রথম নায়েব সুবেদার গফুর ঐ মর্টারের সাহায্যে খানজিয়া বিওপিতে ৫ মিনিট গোলা নিক্ষেপ করেন। এরপর ক্যাপ্টেন হুদা ও লেফটেন্যান্ট বেগ দুই দিক থেকে পাকসেনাদের আক্রমণ করেন। মিনিট ৩০ ধরে এ সংঘর্ষ চলে। প্রবল গোলাগুলির মুখে পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং পালিয়ে সাতক্ষীরা ও পারুলিয়ার পশ্চাৎপসরণ করে।
এই সংঘর্ষে পাকবাহিনী হতাহতের সঠিক তথ্য যায় নি। তবে কাছ থেকে ২টি ২ ইঞ্চি মর্টার, কয়েকটি চায়নিজ এসএমজি ও রাইফেল এবং বেশ কিছু গোলাবারুদ ও রেশন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এবং জনগণের সহয়তায় আহত অবস্থান ৪ জন পাকসেনাকে আটক করা হয়।
[৫৭] ইকবাল জাফর খন্দকার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত