You dont have javascript enabled! Please enable it! খালেদ মোশাররফ, মেজর জেনারেল, বীর উত্তম - সংগ্রামের নোটবুক

খালেদ মোশাররফ, মেজর জেনারেল, বীর উত্তম

খালেদ মোশাররফ একজন বীর সেক্টর কমান্ডার এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১-এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নোয়াখালী, কুমিল্লার আখাউড়া, ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত, ঢাকা ও ফরিদপুরের কিছু অংশ নিয়ে ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
তাঁর জন্ম জামালপুর জেলায় ওসমানপুর থানার মোশাররফগঞ্জ গ্রামে ১৯৩৮ সালে। ১৯৫৩ সালে কক্সবাজার হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করে কাকুল মিলিটারি একাডেমীতে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে কমিশন লাভের পর সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ট্রেনিং স্কুলে দীর্ঘ আট বছর (১৯৫৭-৬৫) বহুমুখী সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধকালে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্ট নিযুক্ত হন এবং যুদ্ধের পর পরই কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে ইন্সাট্রাক্টর পদে যোগ দেন। কাকুল একাডেমিত থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর মেজর পদে উন্নীত হন। ১৯৬৮ সালে কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে তিনি পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন এবং খারিয়ার ৫৭ বিগ্রেডের বিগ্রেড মেজর নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তিনি ঢাকায় বদলি হন এবং এ সময় জার্মানি ও লন্ডনে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। খালেদ মোশাররফ ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ কুমিল্লার ক্যান্টনমেণ্ট চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনি নিজেই এক বাহিনী সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে নিজেকে উৎসর্গ করেন।
চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি রেজিমেন্টের সব আবাঙ্গালি অফিসারদের নদী করেন। কৌশলগত কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তাঁর বাহিনীর সদর দপ্তর তেলিয়াপাড়া চা বাগানে নিয়ে যান। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খালেদ মোশাররফ অত্যন্ত সফল্ভাবে পাকাবাহিনির মোকাবেলা করেন। কিন্ত বিমান আক্রমণে টিকতে না পেরে এপ্রিলের শেষের দিকে তাঁকে বাহিনী নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে সরে যেতে হয়। মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রদান করেন। ২৩ অক্টোবর মাথায় গুলির আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং লক্ষ্মৌ সামরিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর আরোগ্য লাভ করেন।
স্বাধীনতার পর খালেদ মোশাররফ ঢাকাস্থ সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে স্টাফ অফিসার নিযুক্ত হন। পরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চঈফ অব জেনারেল স্টাফ পদে উন্নীত হন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরোচিত অবদানের জন্য ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর কিছুসংখ্যক সদস্যের হাতে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হবার পরবর্তী ঘটনা পরম্পারায় খালেদ মোশাররফ ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ এক সামরিক অভ্যুথান ঘটান। ৭ নভেম্বর (১৯৭৫) সিপাহী জনতার পাল্টা অভ্যুথানে তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট নিহত হন।
[৭৩] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত