You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.28 | খুলনা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা - সংগ্রামের নোটবুক

খুলনা শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা

১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ প্রতিরোধ ভেঙে গেলে খুলনা শহর পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা দখলে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা শহর ছেড়ে শহরতলীর সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রহশস্ত্র নিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করে সুসংগঠিত রূপে খুলনায় বিভিন্ন থানায় অবস্থান নিলেও ডিসেম্বরে বিজয়ের পূর্বে তারা খুলনা শহরে অবস্থান নিতে পারেনি। তবে বিভিন্ন সময় তারা শহরে চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। এর মধ্যে আফজালের নেতৃত্বে বোমা হামলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে খুলনা শহরে অবস্থিত মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে অধ্যাপনারত আফজাল এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, তিনি আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে মেজর জলিলের নির্দেশে দুজন সহযোদ্ধা নিয়ে ছদ্মবেশে খুলনা শহরে প্রবেশ করেন। বিভিন্ন কলেজে তখন পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। এ পরীক্ষা বাঁধা দেওয়া অর্থাৎ পরীক্ষা যেন সম্পন্ন হতে না পারে এজন্য খুলনা শহরে পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে আফজাল গেরিলা হামলার প্রস্তুতি নেন। তারা বিভিন্ন সিনেমা হল ও প্রতিষ্ঠানে বোমা ফাটানোর জন্য ছদ্মবেশে বের হন। এসময় জেলা স্কুলের দিকে যাওয়ার পথে তিনি সবুর খানকে কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে সার্কিট হাউসের দিকে অগ্রসর হতে দেখেন। তিনি অত্যন্ত কাছ থেকে অতিক্রম করার সময় সবুর খানকে লক্ষ করে বোমা নিক্ষেপ করার মানসিক প্রস্তুতি নেন। আফজাল বলেন যে, সবুর খান এত কাছে অবস্থান করছিল যে, অতি সহজেই তাকে বোমার আঘাতে হত্যা করা যেত, কিন্তু বোমা নিক্ষেপ করতে উদ্যত হয়েও হঠাৎ কেন যেন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। অতঃপর সেখান থেকে তিনি দ্রুত চলে যান পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক জেলা স্কুলের কাছে এবং সেখানে তিনি বোমা নিক্ষেপ করে দ্রুত সরে পড়েন। বোমার বিকট শব্দে আশেপাশের লোকজন ছুটাছুটি করতে থাকে। একই সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তার সহযোদ্ধারা পিকচার প্যালেস সিনেমা হলসহ কয়েকটি স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে শহরময় হৈচৈ পড়ে যায়। চারদিকে প্রচার হয়ে যায় যে, শহরে মুক্তিযোদ্ধারা প্রবেশ করছে এবং এরকম হামলা অনবরত চলতে থাকবে। এভাবে বোমা বিস্ফোরণে শহরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তৎপরতাও বৃদ্ধি পায়। তারা পথচারীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। এতে পরীক্ষার কার্যক্রম যেমন বন্ধ হয়ে যায় তেমনি শহরে মানুষের আনাগোনাও অনেকটা থেমে যায়। শহরবাসী একটা শ্বাসরুদ্ধকার পরিস্থিতি অতিক্রম করতে থাকে। অতঃপর আফজাল তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতে ফিরে যায়।
[৯২] মোল্লা আমীর হোসেন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত