খুলনার রেলগেটের যুদ্ধ
তদানীস্তন মহেশ্বরপাশা ইউনিয়নে মৃত আমিনুর রহমানের পুত্র আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে উৎসাহী যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে ওঠে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের যুদ্ধে ইপিআরদের সাফল্যের পর কিছু ইপিআর তাদের সাথে যোগদান করলে তাদের মনোবল ও সাহস আরও বৃদ্ধি পায়। পাকসেনাদের প্রতিরোধ করার জন্য ২৮ মার্চ ৭১ তারিখ তারা যশোর সড়কের পশ্চিম পাশে রেলগেটের প্রাপ্ত সীমায় অবস্থিত ‘হামিদা মঞ্জিল’-এর উত্তর ও দক্ষিণে দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেয়। এক সময়ে তাদের প্রতিরক্ষার পালা শেষ হয়। যশোর থেকে খুলনা অভিমুখে আগত পাকসেনাদের কনভয় হামিদা মঞ্জিলের কাছাকাছি পৌঁছে এলে দু’দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ চালায়। এতে তিনজন পাকসেনা নিহত হয় এবং কর্নেল শামস পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। অতঃপর শুরু হয় পাকসেনাদের প্রবল আক্রমণ। বেশ কিছু সময় যুদ্ধ চলার পর একজন ইপিআর সদস্য শহীদ হন এবং অপর একজন আহত হন। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা টিকটে না পেরে অবস্থান ত্যাগ করে সরে পড়ে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত কাজী আব্দুল হামিদের পুত্র কাজী সওকত আলী অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে মহেশ্বরপাশা সাড়াডাঙ্গা কবরখানায় দাফন করেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাকে ডা. গোলাম রহমানের পুত্র ডা. মতিয়ার রহমান চিকিৎসা করেন। এই যুদ্ধে যে সব স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেন তারা হলেম
১. চান মিয়া হাওলাদার পিং জয়নাল হাওলাদার।
২. আলী হায়দার পিং মৃত ইসকেন্দার আলী।
৩. ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম পিং মৃত শেখ বাহাউদ্দীন।
৪. আব্দুল রব পিং মত রাজ হালদার
৫. কাজী নেছার উদ্দীন মন্টু পিং মৃত কাজী শফিউদ্দীন।
৬. মৃত নজরুল ইসলাম মণ্ডল পিং মৃত ইসমাইল মণ্ডল। সর্বসাং মহেশ্বর পাশা। খুলনা শহর পাকসেনাদের দখলে যাবার পরপরই দৌলতপুর থানার মুক্তিযোদ্ধারা উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণার্থে ভারতে চলে যায়। জুন ’৭১-এর পর থেকে তারা গেরিলা কায়দার বিভিন্ন স্থানে চোরা গুপ্তা আক্রমণ চালায়। উল্লেখ্য পাকসেনাদের দৌলতপুর থানা দখলের পরপরই দু’সপ্তাহের মধ্যে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। তাদের সহযোগিতায় পাকসেনারা এই এলাকায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও ধর্ষণ চালায়।
এ অবস্থায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে ও অন্যত্র আশ্রয় নেয়। এ অবস্থা চলতে থাকে এপ্রিল ৭১ থেকে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু এর মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে সেপ্টেম্বর ’৭১ থেকে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দুটি যুদ্ধ। একটি হল গাজীর হাটের যুদ্ধ অপরটি শিরোমণির যুদ্ধ।
[৫৯২] মোঃ আবুবকর সিদ্দিকী
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত