You dont have javascript enabled! Please enable it!

খাটেহারা ব্রিজে প্রথম ও দ্বিতীয় রেইড, নরসিংদী

নরসিংদী সদরে প্রবেশ করেই পাকবাহিনী কৌশলগত এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে ক্যাম্প অথবা বাংকার করে অবস্থান নেয়। খাটেহারা ব্রিজটি ছিল এর মধ্যে অন্যতম। শহর থেকে বের হয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম এটা একটা বড় ব্রিজ। এই ব্রিজটি পাকসেনা থেকে উদ্ধার অথবা ধ্বংস করার জন্য মুক্তিবাহিনী দুবার রেইড পরিচালনা করে। উদ্দেশ্য ঢাকা এবং নরসিংদীর অন্যান্য এলাকার সাথে নরসিংদী সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। প্রথম যুদ্ধটির কোনো সঠিক তারিখ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে প্রথম রেইডটি এপ্রিলের ১৩ অথবা ১৪ তারিখে সংঘটিত হয় বলে ধারণা করা যায় এবং পরবর্তী দ্বিতীয় রেইডটি নভেম্বর মাসে রোজার ঈদের দিন অর্থাৎ ২০ নভেম্বর তারিখে আনুমানিক রাত ১০.৩০ চালানো হয়। খাটেহারা ব্রিজটি সদর থানার “সাহে প্রতাপ মোড়” থেকে ৬০০ গজ পূর্ব দিকে এবং চৌয়ালা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে ৭০০ গজ পশ্চিমে অবস্থিত। খাটেহারা ব্রিজটি খাটেহারা খালের উপর নির্মিত যা উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে। ব্রিজটি মাটি থেকে ১০/১২ ফুট উঁচুতে নির্মিত এবং ব্রিজ থেকে ৩০০ গজ পূর্বে একটি রেললাইন উত্তর-দক্ষিণ বরাবর চলে গেছে। ব্রিজ থেকে আশেপাশের ৫০০-৬০০ গজ এলাকা সহজেই দেখা যায়। নিরাপত্তার জন্য প্রথম থেকেই ব্রিজের পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে রাস্তার দুই পাশে দুটি করে চারটি এবং ব্রিজের দুই পাশে মোট ৮টি বাঙ্কার ছিল। ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচলরত সকল যানবাহন এবং মানুষকে পাকবাহিনীরা তল্লাশী করত। ব্রিজের নিরাপত্তার জন্য প্রথম থেকেই বাঙ্কারের ২৫/৩০ জন পাকসেনা এবং রাজাকার ডিউটি করত। এই অবস্থায় তদানিস্তন ইপিআর এর সদস্যরা এলাকার লোকজন সহ মোট ৪০/৫০ জনের একটি দল ১৩ অথবা ১৪ এপ্রিল ভোররাতে ব্রিজটির উপর রেইড চালায়। পাকসেনাদের অবস্থান অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় এবং সাহায্যের (রিইনফোর্সমেন্ট) দ্রুত ব্যবস্থা থাকায় মুক্তিবাহিনী তেমন সুবিধা করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে পাকসেনাদের প্রচণ্ড চাপে তাদেরকে পিছু হটে এলাকা ছাড়তে হয়েছি। এখানে উল্লেখ্য যে, এই রেইডের পরেই তদানীন্তন ইপিআর দলটি ক্যাপ্টেন মতিউরের নেতৃত্বে আলী জান জুট মিল থেকে লঞ্চে করে ভৈরবে চলে যায়। যুদ্ধ ইপিআর সদস্য (১) মনিরুজ্জামন। (২) মোবারক হোসেন। (৩) আপেল মাহমুদ। (৪) সামছুল হুদা বাচ্চু। (৫) আলী আকবর। (৬) মিজানুর রহমান (তদানীন্তন আলীজান জুট মিলের সহকারী প্রকৌশলী) অংশগ্রহন করেন। এ ছাড়া আরো অনেকেই ছিলেন যাদের নাম জানা যায়নি।
দ্বিতীয় রেইডটির সময় মনিরুজ্জামান ছোট্ট এর নেতৃত্বে প্রায় ১০ জনের একটি দল ব্রিজটি রেইড করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা নভেম্বর মাসে রোজার ঈদের দিনটিকে বেছে নেয়। তাদের ধারণা ছিল যে, ঈদের দিনে হতো পাকসেনাদের কর্তব্যরত ডিউটির সংখ্যা কম থাকবে। উল্লেখ্য যে, ব্রিজের নিরাপত্তার দায়িত্বে কর্তব্যরত পাকসেনাদের বেস ক্যাম্প ছিল চৌয়ালা বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে যা ব্রিজ থেকে মাত্র ৭০০ গজ পশ্চিমে অবস্থিত। ব্রিজ থেকে দেড় কি.মি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিদ্যমান শান্তি-বাওলা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন বৈঠকের পর মোঃ আরমান ব্রিজ এলাকা খুব কাছ থেকে কয়েকবার পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষেণ। পর্যবেক্ষণ মোতাবেক মোঃ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ২টি ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রথমে রেললাইনের পূর্ব প্রান্তে অবস্থান নেয়। ব্রিজটি ধ্বংস করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনিরুজ্জামান ছোট্ট বেশ কিছু পরিমাণ বিস্ফোরক বহন করে। রেললাইনের পূর্ব প্রান্ত থেকে আনুমানিক রাত ২:৩০টায় মুক্তিবাহিনী প্রথম গুলিবর্ষণ শুরু করে। ৬,৭ মিনিট গুলিবর্ষণের সাথে সাথে পূর্বপ্রান্ত হতে (পাকসেনাদের বেস ক্যাম্প) অর্থাৎ মুক্তিবাহিনীর পেছন দেক থেকে ৩-৪ টা গাড়ি দ্রুত তাদের দিকে আসতে থাকে। এতে মুক্তিবাহিনী নিজ অবস্থান ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয় রেইডটিতে যারা অংশগ্রহণ করেছিল বলে জানা যায়ঃ
(১) মোঃ মনিরুজ্জামান ছোট্ট। (২) মোঃ আলী আকবর। (৩) শুক্কুর আলী। (৪) আশরাফ উদ্দিন মুকুল। (৫) জহিরুল হক। (৬) ওয়েজ উদ্দিন। (৭) মোঃ আরমান। (৮) তাজুল ইসলাম। (৯) নুরুল ইসলাম (১০) রিয়াজুল ইসলাম (রাজু)। প্রথম এবং দ্বিতীয় রেইডটিতে কোনো পক্ষেরই কোনোরূপ হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে দুটি ঘটনার সময়ই পাকসেনাদের মজবুত ও উঁচু অবস্থানের জন্য মুক্তিবাহিনীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ফলশ্রুতিতে প্রতিবারই মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
[৫৯৪] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!