কেউন্দিয়ার যুদ্ধ-২, বরিশাল
বরিশালের কাউখালী থানায় কেউন্দিয়া নিবাসী হাবিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামে অপূর্ব সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৫৮ সনে তিনি সেনাবাহিনিতে যোগ দেন। এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে আর্মি থেকে অবসর গ্রহণ করে। বরিশাল পতনের পর তিনি একটি মাত্র রাইফেল নিয়ে দল গঠন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ১১০০ অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন। কেউন্দিয়ার হাবিবুর রহমান, পনা ও সুলতান কাজী একটি দল গঠন করেন। কেউন্দিয়া স্কুলে মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং হতো। কেউন্দিয়া গ্রামের অনেক বীর সন্তান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। তারা ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরের সঙ্গে বানরিপাড়া থানা আক্রমণ করে। কাউখালীর কেউন্দিয়ার মুক্তি বাহিনীর ক্যাম্প থাকায় ঝালকাঠি হতে ৮০জন এবং কাউখালী হতে ১০০ জন পাকসেনা ২২ সেপ্টেম্বর কেউন্দিয়া গ্রাম আক্রমণ করে। তখন থানার ক্যাম্প জুলুহারে এবং হাবিবের ক্যাম্প কুতুবকাটিতে ছিল। পূর্বে তারা ক্যাম্প স্থানান্তরিত করে। পাকবাহিনীর আক্রমণের সংবাদ শুনে আবদুল হাই পনা ১৮ জন এবং হাবিবুর রহমান ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ২টা ৩০ মিনিটে পাকাবাহিনীকে গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ করে। চারদিকে খাল, ধানক্ষেত এবং মাঠ ভর্তি পানি। পাকসেনারা মুক্তি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। এ যুদ্ধে ১৭ জন পাকসেনা সহ ৩০ জন নিহত হয়। তিনজন বেলুচ সেনা ধরা পড়ে এবং তাদের মুজিবনগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারা বাংলাদেশ বেতার হতে বক্তব্য পেশ করে। বাকি সৈন্যরা কোনো রকমে পালিয়ে কাউখালী যায়। হানাদার বাহিনীর নিকট হতে মুক্তিযোদ্ধারা ৩টি এলএমজি, দু’ইঞ্চি মটার ও এনার্গা দখল করে। কেউন্দিয়ার যুদ্ধে যারা অংশগ্রহন করেছিলেন তারা হলেন হাবিবুর রহমান, আবদুল হাই পনা, কাজি সুলতান মাহমুদ, আলী হোসেন, আশ্রাব আলী, মোবারেক, ছত্তার মোল্লা, মতিয়ুর রহমান, হিরন, শাহ্ আলম, খাদেম হোসেন, হারুনুর-রশীদ, আলমগীর হোসেন প্রমুখ। হাবিবুর রহমানের দলের সঙ্গে আয়মন জয়ফুলে পাকসেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এখানে মাজেদ হোসেন হাওলাদার শহীদ হন। ৯ ডিসেম্বর হাবিবুর ও তাঁর দল কাউখালী থানা মুক্ত করে। উচ্চারিত হয় হাজারো কন্ঠে “জয় বাংলা- তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব”।
[৫৭] সিরজাউদ্দিন আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত