You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.03 | কুশলীবাসা রাজকার ক্যাম্প আক্রমণ, চাঁদপুর - সংগ্রামের নোটবুক

কুশলীবাসা রাজকার ক্যাম্প আক্রমণ, চাঁদপুর

রাজাকারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ও দিশেহারা অবস্থায় চাঁদপুর ইউনিয়নের রাজাকাররা ৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা খবিরুদ্দিনকে (আনসার বাহিনীর সদস্য) ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খোন্দকার গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে কুশলীবাসা প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পটি মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ১০/১২ জন স্থানীয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ৩০৩ রাইফেল ও কিছু হাতবোমা সম্ভল করে ৪ আগস্টে ভোররাতে এ ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। ২০/২৫ জন রাজাকার তীব্র প্রতিরোধ করতে থাকে। বেশ কয়েক ঘন্টা উভয়পক্ষে প্রচণ্ড গোলাগুলি চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে রাজাকার আবদুল করিম নিহত হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আজহারুল ইসলাম, রেজাউল হক বাবুল, আশরাফুল আলম (কুশলীবাসা) এবং মোহন মৃধা (আলামপুর) তাদের হাতে ধরা পড়ে। অমানুষিক নির্যাতনে আশরাফুল আলম ও মোহন মৃধা চিত পঙ্গুত্ব বরণ করেন। পড়ে সংগঠকগণ অন্যদের মুক্ত করেন। আগস্টের ১০/১২ তারিখে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে আবদুল মাসুদ ফুল, সরোয়ার মোল্লা, আলাউদ্দিন মিয়া, আ. সোবহান প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা পান্টি বাজারে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উঠিয়ে রাখেন এবং পতাকার নিরাপত্তাস্বরূপ এর চারপাশে মাইন পুঁতে রাখেন। উল্লেখ্য, এর কাছেই পান্টি রাজাকার ক্যাম্পটি থাকলেও কেউ পতাকা নামানোর সাহস করেনি। পড়ে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধারাই তা নিরাপদ স্থান সরিয়ে নেন। মধুপুর স্কুলের রাজাকার ক্যাম্পটি শেখপাড়াতে স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়। এছাড়া শহিদুল হক আন্টুর দলসহ বেশিকিছু মুক্তিযোদ্ধা নন্দালালপুর বাজারে ক্যাম্পটি আক্রমণ করেন। এরূপ বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে রাজাকাররা তাদের প্রভু পাকসেনাদের আরও সহায়তা কামনা করে। কাসিমপুর, বাঁশগ্রাম এবং কুমারখালী শহরে (মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে) মিলিশিয়া বাহিনী ব্যাপক সমাবেশ করে। এলাকাবাসীর ভাষায় এদেরকে “বোম পুলিশ” বলা হতো। এছাড়া পাকসেনারা কুশলীবাসা, পান্টি, বানিয়াখড়ি প্রভৃতি স্থানে সেপ্টেম্বর অস্থায়ী ক্যাম্প করে। উত্তরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলোতে ক্যাম্প না করলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে কুমারখালী থেকে নিয়মিত টহল দিতে থাকে এবং পরপর বেশ কয়েকটি অভিযান চালায়।

[৫৯৪] এ.টি.এম. যায়েদ হোসেন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত