You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাশিয়ানী থানা আক্রমণ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

১৪ ই আগস্ট রাতে কাশিয়ানী থানা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে। থানায় তখন ৫৬ জন পাকমিলিশিয়া ছিল। মনু মিয়া, হায়দার আলী ফকির, আলাউদ্দিন, জয়নগরের মনু মিয়া ও মুস্তাফিজুর রহমানসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণে অংশ নেয়। দুর্গাপুরে ২৬ শে আগষ্ট হাবিলদার শফিক অতর্কিতভাবে পাকসেনা কর্তৃক আক্রান্ত হন। মুক্তিযোদ্ধারা মর্টার ও হালকা মেশিনগানের গোলা নিক্ষেপ করে নিরাপদে ফিরে আসে। সারদা পুলিশ একাডেমীতে অবস্থানরত পাকিস্তানী কোম্পানির উপরে অতর্কিত আক্রমণ করা হয় ১৭ই আগস্ট। এই দুঃসাহসিক অভিযানে ১জন ছাড়া সকলেই শহীদ হয়। মীরগঞ্জে ২২শে আগস্ট সুবেদার মেবোসসারুল ইসলাম চারঘাট থানার মীরগঞ্জ বিওপি আক্রমণ করেন। নিদ্রামগ্ন পাকসেনারা সকলেই নিহত হন। ১৪ই অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মেখপাড়া সাব-সেক্টর কমান্ডার নির্দেশে দুর্গাপুর থানার গলহরি যান। পাকসেনারা জানতে পেরে আক্রমণ করে। বাঁশের সেতুর উপর দিয়ে যখন পাকসেনা আসা শুরু করে তখন মুক্তিবাহিনী গুলিবর্ষণ শুরু করে। এখানে ৭৩ জন পাকসেনা ও ২ জন অফিসার নিহত হয়। লালগোলা সাব-সেক্টর মেজর গিয়াসের নেতৃত্বে অমিতবিক্রমে যুদ্ধ চলে। রাধাকান্তপুরেরে যুদ্ধ ও ইসলামপুরে অবস্থিত পাকঘাঁটি আক্রমণ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। পাকসেনাকে নবাবগঞ্জে পশাৎপরসরণ করতে বাধ্য হয়। হামজাপুর সাব-সেক্টর ১৩/১৪ নভেম্বর ঘনেপুর বিওপি আক্রমণ করে ৩০ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। সাতাশে নভেম্বর মেজর গিয়াস পাঁচ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পোড়াগ্রাম আক্রমণ করেন। এই ভয়াবহ যুদ্ধে ৩০ জন পাকসেনা ও ৫০ জন রাজাকার নিহত হন। ভোলাহাট সাব-সেক্টরে রহমপুর আলীনগরস্থ পাকঘাটিতে লেঃ রফিকের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা করা হয় ৭ নভেম্বর। পাঁচজন পাকসেনা নিহত হয় এবং মহানন্দা নদী পার হয়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। ভোলাহাট থেকে রহমপুর পর্যন্ত বিস্তির্ণ ১০০ বর্গমাইল এলাকা ছিল সম্পূর্ণ মুক। সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল পদলিতে। মাহনন্দা নদীর দু’পাশে আলীনগর থেকে শাহপুর গড় পর্যন্ত দীর্ঘ ৭ মাইল মুক্তিবাহিনী ডিফেন্স ছিল। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আলমপুরে আম্রকাননে অবস্থিত পাকঘাঁটি আক্রমণ করা হয়েছিল ১৮ই নভেম্বর। এই যুদ্ধে লেঃ রফিক ও লেঃ কাইয়ুম ২ কোম্পানি সৈন্য নিয়ে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর আলমপুর দখল হয়েছিল কিন্তু আকস্মিকভাবে পিছন দিক থেকে শত্রুর গুলি আসতে থাকে। পেছনের বাঙ্কারে শত্রু জীবিত অবস্থায় লুকিয়ে ছিল, অগ্রসরমান মুক্তিযোদ্ধারা কেউই তা খেয়াল করেনি। মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং পাকসেনারা আলমপুর পুনর্দখল করে। নভেম্বর শেষের দিকে সংঘটিত হয় শাহপুর গড়ের যুদ্ধ। পাকসেনারা একটি ব্যাটালিয়ন শাহপুর গড় আক্রমণ করে। এই আক্রমণে রণাঙ্গনে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেন স্বয়ং সেক্টর কমান্ডার লেঃ কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান। বীরশেষ্ঠ জাহাঙ্গীর কলাবাড়ি, ছোবরা, কানসাটা ও বারঘরিয়ার যুদ্ধে বীর নায়ক হয়ে আছে। একটি মানুষ যে কত সাহসী ও তেজস্বী হতে পারে জাহাঙ্গীর ছিলেন তাঁর দৃষ্টান্ত। প্রতিটি যুদ্ধে সবার আগে থেকে তিনি নেতৃত্ব দিতেন। এ ছাড়া ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের বীরত্ব ও সাহসের বর্ণনা করা একটি অসম্ভব ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তিনি যে শৌর্যবীর্যের পরিচয় দিয়েছেন তা সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য গর্ব ও অহংকারের ব্যাপার। বিরলের যুদ্ধ এখন ঐ অঞ্চলেরর মানুষের মুখে শোনা যায়। এই যুদ্ধে ক্যাপ্টেন ইদ্রিস আহত হন। তিনদিন পর লেঃ সাইফুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। লেঃ কায়সার ও আমিন এই যুদ্ধে বিশেষ বীরত্বের পরিচয় দেন।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!