কালিয়া হরিপুর অ্যাম্বুশ, সিরাজগঞ্জ
কালিয়া হরিপুর বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কালিয়া হরিপু ইউনিয়নে অবস্থিত। সিরাজগঞ্জ শহরের পতনের ফলে পাকহানাদার বাহিনী ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভোরের দিকে সিরাজগঞ্জের শহর থেকে পাবনার দিকে পালিয়ে যাব্বার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধারা খুব ভোরেই পাকহানাদার বাহিনীর পালিয়ে যাবার খবর জানতে পারে এবং সম্ভাব্য রাস্তার ওপর নজর রাখে। এই অবস্থার পরিপেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা দল জানতে পারে যে, হানাদার রেলযোগে সিরাজগঞ্জ থেকে ঈশ্বরদীর দিকে রওয়ানা হয়েছে। কিন্তু কামারখন্দ যাওয়ার পথে মুক্তিযোদ্ধাদের ধাওয়া খেয়ে পুনরায় গাড়ীযোগে সিরাজগঞ্জে উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মুক্তিযোদ্দাদের ধাওয়া ইতোমধ্যে শহরে প্রবেশ করার পর জানতে পারে যে, পাকহানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করছে। তাই তারা শহর থেকে কালিয়া হরিপুরে রওয়ানা হন। মুক্তিযোদ্ধারা কালিয়ার হাটে সমবেত হয় এবং হানাদার বাহিনীকে ধ্বংসকরার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধারা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একদলকে কালিয়াহরিপুর রেলস্টেশনে পাঠানো হয়। তারা প্রবল যুদ্ধে পাকবাহিনীকে পরাস্ত করে। অন্য দল কালিয়াহরিপুরের কাছাকাছি পাকহানাদার বাহিনীর গাড়ী বহরের উপর আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনীর গাড়ী বহরে ছিল ২টি ৩ টন লরী এবং একটি জীপ। মুক্তিযোদ্ধারা গাড়ীবহরে সামনে থাকা জীপের চাকায় গুলি করে জীপটিকে অকেজো করে দেয়। এই সময় তাড়াহুড়ো করে গাড়ী ঘোরানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পাকহানাদার বাহিনীর ৩ টন লরী উল্টোদিকে ঘোরাতে সক্ষম হয় এবং কামারখন্দে পালিয়ে যায়। এই অবস্থায় পাকবাহিনী ১টি জীপ ও একটি ৩ টন লরী ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল ২ ঘন্টা। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের হতাহত হওয়ার কোনো সংবাদ না পাওয়া গেলেও একজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।
[৫৯৭] চাঁদ সুলতানা কাওছার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত