কালিগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের যুদ্ধ, গাজীপুর
কালিগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিস গাজিপুর জেলার দক্ষিন-পূর্বে নরসিংদী জেলার সীমান্ত ঘেঁষা কালিগঞ্জ থানার অন্তর্গত কালিগঞ্জ বাজার হতে প্রায় ১কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এশিয়ার মধ্যে বৃহৎ মসলিন কটন মিলস এলাকার পেছনে অবস্থিত। এর দক্ষিণ ও দক্ষিন-পূর্ব দিক দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী বয়ে গেছে। টঙ্গি-কালিগঞ্জ পাক সড়কটি এর উত্তর দিক দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমগ্র কালিগঞ্জ এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সমগ্র এলাকাকে শীতলক্ষার একটি শাখা দুইভাগে বিভক্ত করেছে। উত্তর অংশের নাম উত্তর অংশের নাম উত্তর বদাতি ও দক্ষিণ অংশের নাম দক্ষিণ বদাতি। পাকবাহিনী মূলত উত্তর বদাতি ও এই এলাকায় অবস্থিত পুরাতন সাবরেজিস্ট্রারের অফিসে অবস্থান নেয় এবং তাদের ট্যাংকের অবস্থান ছিল কটন মিলস এর প্রধান সড়কের উপরে অবস্থিত ব্রিজের কাছে। এই এলাকায় পাকবাহিনীর আনুমানিক একটি কোম্পানি জনবল ছিল। এঁদের সাথে ছিল এক ট্রুপ ট্যাংক মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় ছিল কম এবং কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ফেরদৌস। কালিগঞ্জ থানা হেডকোয়ার্টারের আশে পাশে অনেকগুলো খণ্ড যুদ্ধের মধ্যে কালিগঞ্জ সাব্রেজিস্ট্রি অফদিসের যুদ্ধ অন্যতম। তঙ্গি-ঘোড়াশাল রেল লাইনকে শত্রুমুক্ত রাখতে পাকবাহিনী আড়িখোলা রেলস্টেশনে অবস্থান নেয় এবং এর পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি ব্রিজকে সার্বক্ষণিক পাহারা দেয়ার জন্য বাঙ্কার নির্মাণ করে। এদের মূল অবস্থান ছহিল কালিগঞ্জ থানা কমপ্লেক্স। তাছাড়া পাকবাহিনী মসলিন কটন প পাওয়ার হাউজও পাহারা দিতে থাকে। নভেম্বরের ৪-৫ তারিখে আড়িখোলা স্টেশনের নিকটবর্তী রেলওয়ে ব্রিজকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হলে তারা কালিগঞ্জ শহরের দিকে নজর দেয়। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাকবাহিনী সোমবাজার এলাকা মুক্তিবাহিনীর কর্মতৎপরতা অনুভব করে। নভেম্বর ২০ তারিখে শক্তি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দক্ষিণ বদাতি এলাকায় আক্রমণ করার পরিকল্পনা রচনা করে। প্রথম গ্রুপ মি. দেলোয়ারের নেতৃত্বে নদী পথের দিকে দ্বিতীয় গ্রুপ মি. তমিজ উদ্দিন ও মি. ফেরদৌস এর নেতৃত্বে সোমবাজার ব্রিজ এলাকায় এবং তৃতীয় গ্রুপটি মি. আলী হোসেনের নেতৃত্বে বোয়াইলি ব্রিজ এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে। ২৫ নভেম্বর সারাদিন পাকবাহিনী থেমে থেমে ট্যাংক ও মর্টার শেলিং করতে থাকে। পক্ষান্তরে মুক্তিবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। ঐ দিনই সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মুক্তিবাহিনী তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে পাকসেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবস্থা খারাপ অনুধাবন করে পাকবাহিনী সাবরেজিস্ট্রি অফিস জ্বালিয়ে দেয় এবং ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় সকল অবস্থান গুতিয়ে নিয়ে কালিগঞ্জ থানা থেকে আড়িখোলা স্টেশন হয়ে পুবাইলের দিক পশ্চাৎপদ করে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের তীব্রতায় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ কালিগঞ্জ থানা কমপ্লেক্স রেখে যায়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক শহীদ হন। পাকবাহিনীর হতাহতের কোনো খবর জানা যায়নি।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত