You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.24 | কামারখোলা যুদ্ধ, মুন্সিগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

কামারখোলা যুদ্ধ, মুন্সিগঞ্জ

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার প্রত্যন্ত গ্রাম কামারখোলার মত জায়গায়ও আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। এ যুদ্ধ সম্পর্কে ‘সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’ পত্রিকা লিখেছে ‘গত ২৪ অক্টোবর শ্রীনগর থানার কামারখোলা গ্রামে আমাদের মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা পাকসেনা ও রাজাকারদের একটি দলের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা করে। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার কোলাপাড়া ইউনিয়নের নন্দনওশার পরিত্যক্ত বাড়িতে আতিকউল্লাহ খান মাসুদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শক্তিশালী ক্যাম্প গড়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে ২৪ অক্টোবর কমান্ডার মাসুদ ভাগ্যকূল ইউনিটের কমান্ডার আবদুস শহীদ ভূঁইয়া, সহযোদ্ধা বাহারুল ইসলাম, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহী আবদুল হামিল খসরু ও হাবিলদার বাহাউদ্দিনকে কোলাপড়া ক্যাম্পে আসার জরুরী বার্তা পাঠান। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযোদ্ধা আবদুস শহীদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা যখন কোলাপাড়া ক্যাম্পে পৌঁছাই তখন কমান্ডার সোলায়মানের সহযোদ্ধা মোশাররফ, মোয়াজ্জেম ও কামালের সাথে আলাপ করছিলেন মাসুদ ভাই, আমাকে জানালেন যে, শ্রীনগরের ডাকবাংলায় অবস্থিত পাক বাহিনীর ক্যাম্প থেকে হানাদাররা প্রায়াই কামারখোলা, দক্ষিণ পাইকসা গ্রাম ঢুকে লুটতরাজ ও নারীধর্ষণ করছে। ভাগ্যকূল, কোলাপড়া ও কাজিরপাগলা তিন কমান্ডের যৌথ প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিলেন। কৌশল ঠিক করা হয় যে, ২৫ অক্টোবর বিকেল ৩ টায় কমান্ডার সুলায়মান নিজ ইউনিটের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কমান্ডার মাসুদের বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিবে। পরিকল্পনা অনুসারে আমাদের ৩টি কমান্ড একত্রিত হয় দক্ষিণ পাইকসা গ্রামের কালী-শিকদারের বাড়ির পশ্চিম দিকের ছাড়াবাড়িতে এ্যামবুশ পাতি পাকবাহিনীকে আক্রমণে জন্য । ঠিক এই সময় খবর আসে যে, দুটি কেরাইয়া নৌকায় চড়ে পাক হানাদার বাহিনী দক্ষিণ পাইকসা গ্রামের দিকে আসছে। খবর পেয়ে আমরা সবাই সতর্ক হয়ে যাই। হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা কালী শিকদারের বাড়ির কাছাকাছি চলে এলে দক্ষিণ পাইকসা গ্রামের এক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কথা পাকবাহিনীকে জানিয়ে দেয়। বৃদ্ধের মুখে আমাদের অবস্থান জানার সঙ্গে সঙ্গে কেরাইয়া নৌকা দুটি গতি পরিবর্তন করে দ্রুত শ্রীনগরের দিকে যেতে শুরু করে। এই খবর পাওয়া মাত্র আমরা ৬/৭টি কোষা নৌকা নিয়ে পাকবাহিনীকে ধাওয়া করে কামারখোলা পর্যন্ত নিয়ে যাই। কিন্তু তখনও পাকবাহিনীর নৌকা নাগালের বাহিরে। তাই নতুন কৌশল গ্রহণ করি। কমান্ডার মাসুদ, কমান্ডার সুলায়মান ও আমি কয়েকজন শক্তিশালী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ৩ টি নৌকা দ্রুতবেগে চালিয়ে কামারখোলা গ্রামের খালপারের একটি বাড়িতে উঠি। পজিশন নিয়ে আমরা পাকবাহিনীর কেরাইয়া নৌকা লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করি। আমাদের আকস্মিক এই আক্রমণের জন্য ওরা প্রস্তুত ছিল না মোটেও। খালের পূর্বপাড়ের গলা পানিতে লাফিয়ে পড়ে ওরা এবং পাল্টা গুলি বর্ষণ শুরু করে। গোলাগুলির আওয়াজ পৌঁছে যায় শ্রীনগর ডাক বাংলার পাকবাহিনীর ক্যাম্পে। সঙ্গে সঙ্গেই পাকবাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা গানবোটে চড়ে মর্টারের সেল নিক্ষেপ ও এলএমজির ব্রাশ ফায়ার করতে করতে কামারখোলার দিকে এগুতে থাকে। কামারখোলায় পাকবাহিনীর সাথে আমাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। এই সংঘর্ষে পাকবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য হতাহত হলেও চূড়ান্তভাবে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরে আমরা খবর পাই যে, কেরাইয়া নৌকায় আসা ১০ জন পাকসেনার মধ্যে ৮ জনই আমাদের গুলিতে মারত্মকভাবে আহত হয়েছিল।
[৮৮] হাসিনা আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত