You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাদিয়ার যুদ্ধ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে এ স্থানটির নাম বহু উচ্চারিত হয়েছে। আত্নর্জাতিক প্রচার মাধ্যমগুলো এ স্থানটির সচিত্র যুদ্ধ সংবাদও প্রচার করেছে। পাকবাহিনীর কাছে এ স্থানটির নাম বোগদাদ (ভয়ঙ্কর স্থান) হিসেবে পরিচিত ছিল। তাই এর আশেপাশের সমস্ত ঘরবাড়ি পাকবাহিনী জ্বালিয়ে দেয়, এমন কি গাছপালাগুলো পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। তবুও তারা রুখতে পারেনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। ৪২ টি গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে এ জায়গায়। ২৫ বার স্থাপন করা হয়েছে স্থল মাইন।
মতান্তরে, এ স্থানে পাকসেনাদের ২ শতাধিক সৈন্য নিহত হয়। তাদের ২২টি যানবাহন আর সড়ক পরিবহন সংস্থার ১টি বাস ধ্বংস হয় এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩০টির মতো। কৌশলগত কারণ এবং জনশূন্য অবস্থানগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা এ স্থানটিকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেয়। জনপদগুলোতে যুদ্ধ সংঘটিত হলে পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা চালাতো। তাই মুক্তিবাহিনী এ স্থানটিকে বেশী প্রাধান্য দেয়। অপরদিকে দু’দিকে থেকে হামলা করার মতো উপযুক্ত স্থান থাকায়ও যুদ্ধক্ষেত্রে হিসেবে স্থানটি স্থানটি গুরুত্ব পায়। এসব যুদ্ধক্ষেত্রের সফল যোদ্ধা হিসেবে অনেক বীর যোদ্ধার নামই শোনা যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ ও সফল যুদ্ধগোলো পরিচালনা করেন নোয়াখালির মুক্তিযুদ্ধের দুই কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব সুবেদার লুৎফর রহমান ও প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন ভূঁইয়া। বগাদিয়ায় মুক্তিবাহিনীর ক্রমবর্ধমান গেরিলা অপারেশন পাকবাহিনী নোয়খালি-কুমিল্লার মধ্যে যাতায়াতকে কন্টকময় করে তোলে। তাই পাকবাহিনী ও অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধারাও একে রক্ষায় অপরিশীম গুরুত্বসহ বিবেচনা করে। মে মাসের প্রথম থেকে কাদিয়া দখলের চেষ্টা চালায় পাকবাহিনী। নায়েক সিরাজ এক প্লাটুন যোদ্ধা নিয়ে কাদিয়া সেতুর কাছে এপ্রিলের শেষ দিকে এ্যামবুশ করেন। ১ মে সেতু দিয়ে পাকবাহিনী তিনটি তিন টনের লরি কিছু দূরত্ব বজায় রেখে অগ্রসর হওয়ার সময় নায়েক সিরাজ পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালান। প্রথম ও শেষ গাড়িটির ওপর গুলি চালালে একটি গাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এখানে প্রায় ১৫/২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকসেনারা ৩ ইঞ্চি মর্টার ও মেশিনগান থেকে অবিরাম গুলিবর্ষণ করে। দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ করে নায়েক সিরাজ তাঁর মুক্তিযোদ্ধা দলকে নিয়ে পিছু হটে যান। পাকসেনারা এখানে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার নুরুল আমিন গুরুতর আহত হন। বগাদিয়াতে পুনরায় যুদ্ধ হয় ৯ মে। নায়েক সুবেদার ওয়ালিউল্লাহ ঐদিন পাকবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের একজন অফিসারসহ ছয়জন পাক সৈন্যর ওপর আক্রমণ চালালে ২ জন নিহত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ওয়ালিউল্লাহর দল ছাড়াও সুবেদার লুৎফর রহমানের দল অংশ নেন। প্রায় ৪/৫ ঘন্টা গুলি বিনিময় হয়। অবশেষে শত্রুরা হতাহত সৈন্যদের নিয়ে চৌমুহনীর দিকে চলে যায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার ওয়ালিউল্লাহ আহত হন। ১৯ মে কাদিয়াতে পুনর‍্য সংঘর্ষ হয়। ৩ জন পাকসেনা বেবট্যাক্সিযোগে লাকসাম যাওয়ার সময় বগাদিয়া যুদ্ধে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকবাহিনী ব্যাপক গণহত্যা চালায় কাদিয়ায়। আশপাশের ৫/৬ টি গ্রাম থেকে ৮৩ জনকে ধরে এনে তারা হত্যা করে। পরবর্তীকালে অর্থাৎ অক্টোবর মাসে তারা আরও ব্যাপক গণহত্যা চালায় সোনাইমুড়ি-লাকসাম সড়কের কাঁঠালিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাতা মাইনের বিস্ফোরণে পাকবাহিনীর ২টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই বিস্ফোরণে ৯ জন পাকসেনা নিহত হলে প্রতিশোধ স্বরূপ তারা গ্রামের ১৭ জনকে হত্যা করে।
[৭] মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!