কাদেরীয়া বাহিনী, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল জেলার সখিপুরের বহেড়াতলীতে কাদের সিদ্দিকী ১৯৭১-এর ১৪ মে চারশত ছাত্র-যুবক নিয়ে কাদেরীয়া বাহিনী গঠন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে বহেড়াতলীতেই তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। অবস্থানগত কারণে পাকবাহিনীর পক্ষে সখিপুর আক্রমণ করা ছিল অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। গাছপালা, টিলার ঘেরা সখিপুর ছিল দুর্গম। প্রতি মুহূর্তেই পথ হারানোর আশংকা, এসব কারণে সখিপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সদর দপ্তর করা ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কাদেরীয়া বাহিনীকে শায়েস্তা করার জন্য পাকহানাদাররা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও দারুণভাবে মার খেয়ে ফিরে যায়। বাধ্য হয়ে পাক-হানাদাররা সখিপুরে কাদেরীয়া বাহিনীর সদর দপ্তর জেনেও আক্রমণ থেকে বিরত থাকে।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে নিয়মিত ও অনিয়মিত বাহিনী ছাড়াও সম্পূর্ণ স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে কিছু বাহিনী গড়ে উঠেছিল। এসব বাহিনীর কিছু অংশ দেশের ভেতরেই জন্ম হয় এবং তারা পাকহানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত করতে সক্ষম হন। এ সব বাহিনীর মধ্যে ‘কাদেরিয়া বাহিনী’ সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ও সর্বাধিক কৃতিত্বের দাবিদার।
কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল অঞ্চলে যে এক দুর্ধর্ষ বাহিনী গড়ে তোলেন তার নাম ‘কাদেরিয়া বাহিনী’। বাংলাদেশের ভেতর থেকে এই বাহিনী তাদের নিজস্ব নিয়মে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এরা প্রায় সাড়ে তিন’শ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে কাদের সিদ্দিকী চল্লিশটিরও বেশী যুদ্ধে নিজ নেতৃত্বে দান করেছেন। সে সব যুদ্ধ কাদের সিদ্দিকীর পাশে থেকে বেশিরভাগ সময়েই পনের থেকে বিশ জন সহযোদ্ধা যুদ্ধ করেছে। কাদেরীয়া বাহিনীর হাতে তিন হাজারেরও বেশী পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। বন্দী হয় প্রায় তের হাজার পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকার। পাকহানাদার বাহিনীর কাছে কাদেরিয়া বাহিনী ছিল মহাআতঙ্ক স্বরূপ। এ বাহিনীর নাম শোনা মাত্রই পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগিদের বকে কাঁপন ধরতো। কাদেরীয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ছিল প্রায় সতের হাজার। টাঙ্গাইল জেলার সবক’টি থানা, ময়মনসিংহের পাঁচটি থানা, ঢাকার চারটি থানা, পাবনার তিনটি থানাসহ প্রায় পনের হাজার বর্গমাইল এলাকা কাদেরীয়া বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। কাদেরীয়া বাহিনীর দখলে থাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম মুক্ত এলাকা টাঙ্গাইলেই ভারতীয় ছত্রী সেনারা (প্যারাসুট বাহিনী) অবতরণের প্রোটেকশন পেয়েছিল।
[৭৩] রিয়াজ আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত