You dont have javascript enabled! Please enable it!

কানপুরের যুদ্ধ, রাজশাহী

রাজশাহী ১৯৭১-এর ২৯ এপ্রিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আসাদ আহমদ বায়রনের নেতৃত্বে একদল গেরিলা নবাবগঞ্জ মহকুমার শিবগঞ্জ থানাধীন পাগলা নদীর ওপার থেকে নদী পার হয়ে কানপুর যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। রাত তখন নয়টা বেজে ত্রিশ মিনিট। দুর্লভপুর গেরিলা শিবির থেকে বায়রন তার দল নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সাথীদের সকলের চোখে মুখে যেন কিছুটা নৈরাজ্যর ছাপ। হয়তো মনে হচ্ছিল এই দুঃসাহসিক অপারেশনে বুঝি কেউ আর ফিরে আসবে না। পরক্ষণেই তাদের আবার মনে হয়েছে যেমন করেই হোক তাদের এ অপারেশনে সাফল্য লাভ করতেই হবে। কারণ দখলদার নরঘাতক ইয়াহিয়া বাহিনীর কবল থেকে মুক্তির আশায় বাংলাদেশের মানুষ দিন গুণছে। দু’টি মাত্র ছোট নৌকা তাদের সম্ভল, অস্ত্রশস্ত্র নৌকায় রাখা আর গেরিলারা নৌকায় ভেসে চলছে। রাতের অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে চলেছে পশুহত্যার উল্লাসে। রাত পৌনে এগারোটা। শেষ হলো জলে ভাসা। কানপুরের কাছে এক আখক্ষেতে নৌকা রাখা হয়। নৌকায় রাখা অস্ত্র তারা হাতে তুলে নেয়। আবার শুরু হয় যাত্রা। এক বুক পানি ভেঙে এগিয়ে চলছে। খানিকটা দূর ঘুরে কানপুর গ্রামটাকে পেছনে ফেলে এক আম বাগানে প্রবেশ করে। সেখানেই প্রত্যেককে দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হয়।তারা যখন আম বাগানে প্রবেশ করে তখন শিবগঞ্জের খান সেনাদের ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভেসে আসছিল মুহুর্মূহ গোলাগুলির আওয়াজ। পথপ্রদর্শক ছিল এগারো বছরের একটি বালক। তার নাম জানা যায়নি। প্রথমে যদিও বালকের ওপর ভরসা করা যায়নি, কিন্তু সে ভুল ভাঙতে খুব দেরী হয়নি। সে অত্যন্ত সুষ্ঠভাবে গেরিলাদের এগিয়ে নিয়ে গেল। পাঞ্জাবি আর রাজাকারদের ট্রেঞ্ঝ ও বাঙ্কারগুলো খুব কাছে থেকে দেখিয়ে দিল। ক্রলিং করে গিয়ে পাহারারত রাজাকারকে কিছু করার সুযোগ না দিয়ে গলা টিপে হত্যা করে অস্ত্র কেড়ে নেয় এগারো বছরের বালকটি। এরপর শুরু হ গেরিলাদের কাজ। অন্যান্য গেরিলারা তড়িৎবেগে দলের নেতাদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ আরম্ভ করে দেয়। যে বাঙ্কারে পাঞ্জাবি ছিল সেখানে গ্রেনেড চার্জ করা হয়। বাঙ্কারে তখন তিনজন পাঞ্জাব ঘুমাচ্ছিল। মাত্র কয়েক সেকেন্ড। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্কার ধ্বংস পড়ে। পাশের বাঙ্কারে গ্রেনেড চার্জ করে হত্যা করা হয় চারজন রাজাকারকে। নিকটের এক বাড়িতে দু’জন রাজাকার ও তিনজন দালাল ছিল। তারা পালিয়ে পাঞ্জাবিদের কাছে খবর নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের রাইফেল তাদের লক্ষ্য করে গর্জন করে ওঠে। অব্যর্থ লক্ষ্য। মুহূর্তে লুটিয়ে পড়ে পাঁচজন মীরজাফর। ইতোমধ্যে পাঞ্জাবিরা টের পেয়ে যায়। প্রায় এক কোম্পানী পাঞ্জাবি ও রাজাকার আক্রমণের জন্য অগ্রসর হয়। আখক্ষেতে নৌকায় রেখে আসা হয়েছিল দু’জনকে। তারা তাদের সাথীদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য খানসেনাদের লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করে। ফলে খানসেনারা হতচকিত হয়ে পড়ে। খানসেনারা ভালোভাবে কিছু বুঝতে পারার আগেই গেরিলারা নৌকায় ফিরে শিবিরে ফিরে যায়। কানপুর অপারেশনে বায়রনের গেরিলা দল একটি এল এম জি, দু’টি চীনা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল সহ বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!