কাজী নূর-উজ্জামান, লে. কর্নেল, বীর উত্তম (১৯২৫-২০১১)
কাজী নূর-উজ্জামান একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাত নং সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধের ৬ বছর আগে সামরিক বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেও ’৭১-এ সময়ের প্রয়োজনে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আবার তিনি অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ঢাকায় ২৫ মার্চের কালো রাতের হত্যাযজ্ঞের পরপরই তিনি যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। ২৮ মার্চ তিনি জানতে পারেন মেজর শফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করে জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের দিকে এগিয়েছে। ৩০ মার্চ ময়মনসিংহে শফিউল্লাহ ও তাঁর রেজিমেণ্টের সঙ্গে দেখা করেন লে. কর্নেল (অব.) কাজী নূর- উজ্জামান। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গেই তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে চলে যান ভারতে। মুজিবনগর সরকার গঠন ও জেনারেল ওসমানীর সিএনসির’স দায়িত্ব গ্রহণের পর জুলাই মাসে তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয় ৭ নং সেক্টরের কমান্ডিং অফিসারের। এর আগে জুন মাসে বাংলাদেশের আর্মির প্রথম অফিসার ব্যাচ ট্রেনিংয়ের জন্য রিক্রুটোমেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁকে। আর এ কাজের জন্য উইং কমান্ডার মির্জার সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের প্রত্যেকটি সেক্টরই তিনি ঘুরে দেখেন। রংপুরের কিছুটা অংশ এবং দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী ও বগুড়ার বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত হয় ৭ নং সেক্টর।
কর্নেল জামানের জন্ম ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ। ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পান তিনি। ১৯৬৪ সালে মেজর হিসেবে স্বেচ্ছায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। ’৭১-এর আগস্ট মাসে তাঁকে লে. কর্নেল পদে উন্নীত করা হয়। ১৯৮১ সালে তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দেশব্যাপী জামাতে ইসলামীসহ একাত্তরের সকল ঘাতকের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলোন গড়ে ওঠে। তিনি সাপ্তাহিক ‘নয়া পদধ্বনি’ সম্পাদক প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করে এবং এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি’ গঠনেও অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
[৭৩] রিয়ায আহমেদন
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত