কাজীপুর থানা আক্রমণ, সিরাজগঞ্জ
কাজীপুর থানা সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর নামক স্থানে অবস্থিত। তবে বর্তমানে উক্ত স্থান অস্তিত্বহীন কারণ তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা পুলিশ স্টেশন ধ্বংস করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা ও পাকবাহিনীর প্রশাসনিক ভিত্তি নষ্ট করার জন্য কাজিপুর থানা আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা (মুক্তিযোদ্ধা) ৯ই সেপ্টেম্বর থানা আক্রমণ করার জন্য তৈরি হয়। রাত ৯ টার সময় কান্তনগর নদীর ঘাটে পৌঁছায়। মধ্যরাতে বৃষ্টি শুরু হলে রাত ৩ টার সময় মুক্তিবাহিনী নৌকা থেকে বের হয়ে কাজিরপুর থানার দিকে মার্চ করে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করার পূর্বে থানার চারদিকে পাট ক্ষেতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু থানার চারদিকে বাঙ্কার থাকায় এক সিপাহী টর্চের আলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে ফেলে এবং চারদিকের বাঙ্কার থেকে গুলি শুরু হয়। মুক্তিবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়, প্রায় ১ ঘন্টা যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি। মুক্তিবাহিনীর এই যুদ্ধ পদ্ধতি ছিল হিট এন্ড রান, তাই স্থায়ীভাবে থানা পতন করে এখানেই থাকা যুক্তিসংগত মনে না করে তারা নিরাপদে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধাদের দুই কমান্ডার খ, ম আক্তার ও ফজলুল মতিন মুক্তার নেতৃত্বে পূর্ব কাজীপুর ও চর কাজীপুরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা বাঙ্কারের উদ্দেশ্যে ফায়ার শুরু করে এবং হানাদার বাহিনীও পাল্টা ফায়ার করতে থাকে। প্রায় ২/৩ ঘন্টা যাবত ফায়ার চলে। কিন্তু এ্যামেনিশন শেষ হয় যাওয়া যুদ্ধ স্থগিত করা হয় এবং এই দিন বাঙ্কার দখল করা সম্ভব হয়নি। ফলে মুক্তিবাহিনী পরেরদিন বাঙ্কার আক্রমণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ৬ ডিসেম্বর দুপুর ১.৩০ টার সময় আবার কাজীপুর আক্রমণ করে। উত্তর দিক খোলা রেখে বাকিদিকে মুক্তিবাহিনী অবস্থান নেয়। প্রায় ২/৩ ঘন্টা যুদ্ধ চলে। এর পরে পাকিস্তানী বিমান দেখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে থাকে। কিন্তু পরদিন পাকবাহিনী সেখান থেকে স্থান ত্যাগ করে। এবং কাজীপুর থানা চিরতরে মুক্ত হয়। এ যুদ্ধে ৪/৫ জন পাকসেনা নিহত হলেও কোনো মুক্তিযোদ্ধার হতাহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
[৫৬] চাঁদ সুলতানা কাওছার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত