You dont have javascript enabled! Please enable it!

কাউলিয়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ, মানিকগঞ্জ

টাঙ্গাইল জেলার সর্ব দক্ষিণে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার উত্তরে নাগরপুর থানা। এ নাগরপুর থানার একটি গ্রামের নাম খাস কাউলিয়া। এখানে একটি রাজাকার ক্যাম্প ছিল রাজাকার বাহিনীর অন্যতম প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক আব্দুল খালেককের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল ছিল খাস কাউলিয়া গ্রাম। রাজাকারদের হত্যা, লুটপাট ও নারী ধর্ষণের ফলে এলাকার মানুশ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। অবশেষে বাতেন বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মল্লিকের নেতৃত্বে রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করার পরিকল্পনা করা হয়। ২৮ শে জুন সোমবার জেনারেল ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ শুনে রাজাকারদের পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলাপ আলোচনার জন্য এক সভা ডাকে খাস কাউলিয়া মাদ্রাসা ও স্কুল প্রাঙ্গনে। এদিন অনেক রাজাকারকে একত্রে পাবার সম্ভাবনায় ফজলুল হক অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
রণকৌশল হিসাবে অভিযানকারী দল বরযাত্রী বেশে রাজাকারদের সভাস্থলের নিকট যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বড় সাজেন অভিযানকারী দলের অধিনায়ক দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফজলুল হক মল্লিক নিজেই। তিনি পিতার জীবদ্দশায় রেখে যাওয়া মাসলাইস লুঙ্গি পড়ে দু’জন সহযোদ্ধা নিয়ে অগ্রসর হন লক্ষ্যস্থলের দিকে। অন্যদেরকে নির্দেশ দেন তাকে পেছনে পেছনে অনুসরণ করতে। কিছুদূর যাবার পর পরিচিত এক বাড়ি থেকে জিন্নাহটুপী, রুমাল ও স্পঞ্জ সংগ্রহ করে প্রকৃত বরের বেশ ধারণ করে নৌকা যোগে সঙ্গীদের নিয়ে সভাস্থলে উপস্থিত হন। মাদ্রাসার সামনে বসা ২৭/২৮ জন লোকের মধ্য থেকে ২/৩ জন এসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ফজলুল হক মল্লিক তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেন-আমার বাবা মারা যাওয়ার বৃদ্ধা মা আমাকে বিয়ে করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করাতে এ বিপদের দিনেও আমি বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমরা দু’জন আগে এসেছি, আমার চাচা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন পেছনে আসছে মিষ্টি নিয়ে। তারই সাথে তিনি ঐ এলাকার পূর্ব পরিচিত একজন কাজীর নামও বলেন। কেউ কেউ ইতস্তত করলেও রাজাকারদের মধ্যে বসা অনেকে উৎসাহী হয়ে বলে ওঠে এতদিন পর বিয়ের মিষ্টি খাব এতে আবার চিন্তার কারণ কি? এরপর দু’জনে অভ্যর্থনা জানিয়ে সভার মাঝে বসিয়ে আলাপ করতে থাকে। ইতোমধ্যে মাগরিবের আযান হয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মল্লিকও নামাজ পড়তে যায়। সুন্নাত নামাজ আদায়ের সময় শেষ রাকাতে তার বেয়নেটের আঘাতে লুঙ্গি ছিরে গেলে নফল পড়া বাদ দিয়ে মাঠে চলে আসে। এরমদ্ধে অন্ধকার হয়ে যায়। ইতোমদ্ধে ইয়াহিয়া খানের ভাষণ (শোনার জন্য একটি ঘরে রাজাকারদের অনেকেই একত্রিত হয়। উপস্থিত রাজাকারদের অনেকেই ইয়াহিয়ার ভাষণ শোনার জন্য রেডিও কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু একজন তাকে হাত ধরে টান দিয়ে বসানোর সময় আবার বেয়নেটের আঘাতে লুঙ্গি ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে তিনি দাড়িয়ে যান এবং ধীরে ধীরে আবার বসেন। সঙ্গের ওপর সঙ্গী পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে বাইরের মাঠে অবস্থান করেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে ফজলুল হক মল্লিক বেয়নেট বের করে নড়াচড়া করতে নিষেদ করে সবাইকে আত্নসমর্পণ করতে বলেন। এ সময় তার পাশে দাঁড়ানো এক যুবকের পিঠে গুলি লাগায় তিনি সতর্ক হয়ে মাটিতেশুয়ে পড়ে এবং অবস্থা বেগতিক দেখে ক্রলিং করে মাঠের মাঝখানে গিয়ে উচ্চস্বরে গুলি বন্ধ করার সংকেত উচ্চারণ করেন। আক্রমণ শুরু এবং বন্ধ করার সাঙ্কেতিক শব্দ ছিল চাঁদ অ ফুল। ভুলবশত অভিযান পরিচালঙ্কারি দল যোগাযোগ অসম্পূর্ণ রেখে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘটনাস্থলে ফজলুল হহক মল্লিক অল্পের জন্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। পরে তিনি গুলিবর্ষণ দলের নেতার উপর চটে যান এবং তাকে র্ভৎসনা করেন। মারাত্নক ভুলের জন্য সুবেদার আলী বারীর নিকট গুলিবর্ষণকারী দলের নেতাকে শাস্তি পেতে হয়েছিল। এই অভিযানে দুঃসাহসিকতার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মোঃ। ফুজলুল হক মল্লিক বাতেন বাহিনীতে ব্যাপক পরিচিতি অ প্রশংসা অর্জন করেন। যাকে উদ্দেশ্য করে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়ে ছিল শত্রুর সেই শচর পালিয়ে যাবার সময় গুলিতে মৃত্যুবরণ করে। এরপর ওই এলাকার রাজাকার অ শান্তিবাহিনীর তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়।
এই আক্রমণে ৮ জন রাজাকার নিহত হয়। কয়েকজন বন্দি করা হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। হতাহত অ পালিয়ে যাওয়া রাজাকারদের নিকট থেকে বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র অ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
[৫৯৫] ফিরোজ খায়রুদ্দিন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!