করাঙ্গি সেতু ধ্বংস অপারেশন, হবিগঞ্জ
জুলাই মাসের প্রথম দিকে আখাউড়া-সিলেট সেকশনে রেললাইন চালু ছিল। অবশ্য দু’ একটি সেতু উড়িয়ে দেওয়ার সরাসরি যোগাযোগ হতো না। তবে পাকিস্তানী বাহিনীর যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার আর কোনো অবনতি না হয় সেদিকে কড়া নজর আরোপ করে। দেশের অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়মিত। সমগ্র দেশ ইয়াহিয়া সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে। মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থান করে তাঁদের সহযোগিতায় শুধু সীমান্তবর্তী এলাকায় হামলা করে পালিয়ে যায় –এমন দাবিকে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করবার জন্য সমগ্র যোগাযোগ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করে। জুলাই মাসের ১৫ তারিখে ৩ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে আশ্রমবাড়ি সাব সেক্টর কমান্ডার আজিজুল রহমানের উপর একটি অপারেশনের দায়িত্ব অর্পন করা হয়। উর্ধধতন পর্যায়ের এ সিদ্ধান্ত জানানোর সাথে সাথে অবিলম্বে তা কার্যকর করবার নির্দেশও আসে। শায়েস্তাগঞ্জ- সিলেট বন্ধ হয়ে যায়। আশ্রপমবাড়ি ক্যাম্প থেকে সেতুটির দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রেকি শেষে ক্যাম্প হতে বাছাই করে ৩০ সদস্যের একটি গেরিলা গ্রুপ আধিনায়ক আবদুস সালাম ও কোম্পানি কমান্ডার ইফতেখার হোসেন শামিম এর নেতৃত্বে প্রেরণ করা হয়। প্রচুর পরিমাণে টিএন্ডটি জাতীয় বিস্ফোরক দ্রব্য, এলএমজি, এসএমজি, গ্রেনেড, বেয়নেট, ২ ইঞ্চি ২টি মর্টারসহ তারা রওনা হন। মুক্তিযোদ্ধার এ দলটিকে দুজন চোরাকারবারী পথ দেখিয়ে পাহাড়ের চড়াই উৎরাই রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসে সেতুটির একবারে কাছে। সেতু পাহারাদার ৮ জন রাজাকারকে তাস খেলা অবস্থায় বীর জোয়ানরা অতর্কিত আক্রমণ চালায়ি মেরে ফেলে এবং রাইফেল ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। অতঃপর সেতুটিতে বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়। নিরাপদ দূরত্ব থেকে অগ্নিসংযোগ করবার সাথে সাথে সেতুর ৬টি স্প্যানের মধ্যে তিনটি উড়ে যায়। পরে রাজাকারদেরকে একটি স্থানে এনে হত্যা করা আশ্রম বাড়িতে নিরাপদে মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে যায়। এই সেতু ধ্বংস করবার ফলে শায়েস্তাগঞ্জ শ্রীমঙ্গল সেকশনে বেশ কিছুদিনের জন্য রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত