করিমপুর যুদ্ধ, ফরিদপুর
যশোর তখন স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছে। যশোর থেকে পিছু হটে আসা সৈন্যরা যৌথ কমান্ডের ধাওয়ার মুখে মধুমতী পার হয়ে এপারে কামারখালী-ডুমাইন-আড়পাড়ায় অবস্থান গ্রহণ করে। যশোর ক্যান্টনমেণ্টের বিয়ার হেড কোয়ার্টার ফরিদপুরে পাকসেনারা নতুন করে প্রস্তুতি নেয়। মুক্তিযোদ্ধারাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন মাঝকান্দিসহ কয়েক স্থানের মুক্তিযোদ্ধারা ওদের কনভয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে বেশ কিছু পাকসেনাকে হতাহত করে। ৯ ডিসেম্বর। নতুবদিয়া ক্যাম্প থেকে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা করিমপুর সংলগ্ন সিএন্ডবি রাস্তায় একটি সেনা গাড়িকে গ্রেনেড চার্জ করে উড়িয়ে দেয়। এমন সময় পাকসেনাদের গড়ির লম্বা বহর এসে এলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু এসে একটি বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকসেনারা বাড়িটি ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা তিন-চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পাল্টা জবাব দিতে থাকে। আতাহারের নেতৃত্বে ৫ জন গুলি করতে করতে বেরিয়ে আসে। তখন বিকেল। সালাউদ্দিন তখনও এলএমজি দিয়ে গুলি করছিল। এ খবর পেয়ে নতুবদিয়া ক্যাম্প থেকে হেমায়েতের নেতৃত্বে আরো একটি ১৫/২০ জনের গ্রুপ এবং গৌড়দিয়া ক্যাম্প থেকে ইলিয়াসের নেতৃত্ব আরো একটি গ্রুপ অগ্রসর হয়। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হেমায়েত আহত হওয়ায় শেষ প্রচেষ্টা ও ব্যর্থ হয়। তখন পাকসেনারা ঐ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পুড়িয়ে মারে। শাহাদাত বরণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলে কাজি সালাউদ্দিন নাসিম, মেজবাউদ্দিন নৌফেল, আবদুল ওহাব, সামসুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, মঈনউদ্দিন, আবদুল হামিদ ও মজিবুর রহমান। ঐ যুদ্ধে মোমিন ও তবিবুর রহমান মারাত্মকভাবে আহত হন, যুদ্ধে বকর সিদ্দিক, আমিনুর রহমান ফরিদ, কাজী ফরিদউদ্দিন, আকরাম আলীম প্রমুখ। স্বাধীনতার পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আগুনে পোড়া দেহাবশেষ উদ্ধার করে আলীপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।
[১৫] আবু সাঈদ খান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত