You dont have javascript enabled! Please enable it!

কড়িয়া বিওপির যুদ্ধ, জয়পুরহাট

২৫ মার্চ ১৯৭১-এ পাকসেনাদের বর্বর হামলার পর অসহায় বাঙালীরা পাঁচবিবি কড়িয়ার রাস্তাটি অনসরণ করে ভারতে পলায়ন করত। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় সীমানা থেকে অপারেশনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করার জন্য কড়িয়া-পাঁচবিবি রাস্তাটি ব্যবহার করত। এ সকল বিষয় বিবেচনা করে বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াত বন্ধ করা এবং সীমানা প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে আউটার পেরিমিটার প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে কড়িয়া বিওপি পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কড়িয়া বিওপিতে পাকসেনারা ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকেই সক্রিভাবে টহলের মাধ্যমে আশপাশের এলাকায় তাদের প্রাধান্য বজার রাখে। ফলে সাধারণ জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচল দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সে কারণে নিজেদের চলাচল বাধামুক্ত ও পাকিস্তানী সৈন্যদের মনোবল দুর্বল করার লক্ষ্যে প্রাই অতর্কিত হামলা করত। তবে কড়িয়া গ্রামের আশপাশের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত মনে হওয়ায় পাকবাহিনী কড়িয়া বিওপিতে শুধুমাত্র বেশ কিছু সংখ্যক রাজাকারের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে নিজেরা সালপাড়া ও পাগলা দেওয়ান ক্যাম্পে শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে কড়িয়া বিওপিতে আনুমানিক ৩০-৪০ জন রাজাকার দায়িত্ব পালন করতে থাকে। এ সুযোগে ক্যাম্পটিতে অবস্থানরত রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করানোর উদ্দেশ্যেই মূলত ১৯৭১ সালের অক্টোবর-নভেম্বরের কোনো একদিন আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। আক্রমণের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজাকারদের ভীতি প্রদর্শন ও নানাবিধ প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাকবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক প্রায় ১০-১২ দিন বিভিন্ন রকম গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালিত করে। কড়িয়া বিওপিতে বড় ধরনের আক্রমণটি পরিচালিত হয় মূলত রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করানোর উদ্দেশ্যে। সময়টি সম্ভবত ১৯৭১ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসের কোনো একদিন। কড়িয়া বিওপিতে প্রায় ৩০-৪০ জন রাজাকার ছিল। উক্ত রাজাকারের দলতি মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট আত্মসমর্পণ করতে আগ্রহী-এই ধরনের একটি গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে অপারেশনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। গ্রামের একজন সাধারণ লোকের মাধ্যমে রাজাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। সফল প্রেষণা দেয়ার পর মুক্তিবাহিনী রাজাকারদেরকে আত্মসমর্পণ করার প্রস্তাব দিলে রাজাকার বাহিনী প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করে এবং সে মোতাবেক সকল কিছু নিশ্চিত করে রাজাকারদের বলা হয় মুক্তিযোদ্ধারা কড়িয়া বিওপি আক্রমণ করার পর একটি নির্দিষ্ট সংকেত দেয়া হবে। সংকেত দেয়ার সাথে সাথে রাজাকাররা তাদের নিজস্ব হাতিয়ার ও গোলাবারুদ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগদান করবে। পরিকল্পনামাফিক শ-খানেক মুক্তিযোদ্ধার দল কড়িয়া বিওপির উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে আক্রমণ পরিচালনা করে। এ আক্রমণে সম্ভবত কাঁচনা গ্রামটিকে বিন্যাস এলাকা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। আক্রমণ রচনার প্রথম কাজটি ছিল রাজাকারদের আত্মসমর্পণের সংকেত দেয়া। সংকেত অনুযায়ী ১৩ জন রাজাকার তাদের নিজস্ব হাতিয়ার ও গোলাবারুদসহ মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। বাকি রাজাকারদের নিকট থেকে আত্মসমর্পণের কোনো সাড়া না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কড়িয়া বিওপিতে গোলাগুলির মাধ্যমে আক্রমণ শুরু করে। এখানে উল্লেখ্য যে, মুক্তিযোদ্ধারা প্রচলিত নিয়মমাফিক আক্রমণ রচনা করে পাকসেনা ক্যাম্পে চড়াও হয়নি। পাকসেনা ক্যাম্প থেকে মোটামুটি ২০০-৩০০ গজ দূরে কাঁচনা গ্রামের সম্মুখের রাস্তা বরাবর অবস্থান গ্রহণ করে শুধুমাত্র ফায়ারিংয়ের মাধ্যমে আক্রমণ রচনা করেছিল। রাজাকারদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্য আংশিক অর্জন হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা সরেজমিনে পাকসেনা ক্যাম্পে আক্রমণ পরিচালনা করেনি। তাই ফায়ার অ্যান্ড মুভ পদ্ধতিতে পশ্চাৎপসরণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা স্থান ত্যাগ করে।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!