You dont have javascript enabled! Please enable it!

আড়িয়াবাজার যুদ্ধ, বগুড়া

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময় দেশের অন্যান্য এলাকার মতো বগুড়া অঞ্চলেও হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়েছিল। এর মধ্যে আড়িয়াবাজারের রেইড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কলসংলগ্ন আড়িয়াবাজারে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী একটি অ্যামুনিশন ডাম্পসহ ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধারা এই ক্যাম্প আক্রমণ করে পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। যুদ্ধের বিবরণ নওগাঁস্থ্র তদানীস্তন ইপিআর উনিং-এর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন গিয়াসে নেতৃত্ব ২৯-৩০ মার্চ ১৯৭১ রাতে বগুড়া শহরের মাটিডালী এলাকায় পাকসেনাদের ওপর সফল অ্যাম্বুশ পরিচালনা করা হয়। অতঃপর ক্যাপ্টেন গিয়াস নওগাঁ ফিরে যান। পাকসেনাদের এই পরাজয়ের ফলে বগুড়া অঞ্চলে তাদের আধিপত্য হ্রাস পায়। ক্যাপ্টেন গিয়াসের নির্দেশনায় ১ এপ্রিল নায়েব সুবেদার আলী আকবরের নেতৃত্ব মুক্তিযোদ্ধারা আড়িয়াবাজারে অবস্থিত অ্যামুনিশন ডাম্প আক্রমণ করেন। অ্যামুনিশন ডাম্পের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে কাট অব পার্টি রেখে পশ্চিম দিক হতে করতোয়া নদীকে লক্ষ্যবস্তুর পেছনে রেখে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। এই যুদ্ধ প্রায় আড়াই ঘন্টা স্থায়ী হয় এবং ইপিআর, পুলিশ ও বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহস ও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলা অবস্থায় পাক-জঙ্গি বিমান মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালালেও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখেন। আড়িয়াবাজারে লক্ষ্যস্থল পর্যন্ত পৌছাতে হলে মুক্তিবাহিনীকে একটা ফাঁকা মাঠ পাড়ি দিতে হয়েছিল। সেইদিন ছিল দক্ষিণের ঝড়ো হাওয়া। মুক্তিবাহিনী গ্রামবাসীকে অনুরোধ জানালেন যে, তারা লক্ষ্যবস্তুর দক্ষিণ দিক থেকে মরিচের গুঁড়া ছাড়তে পারবেন কিনা। তারপর কোথা থেকে এত মরিচের গুঁড়া ভেসে এলো তা বলা কঠিন। সেনা ক্যাম্পে থাকা সবার চোখ- মুখ জ্বলতে লাগল। বেলা তখন আড়াইটা। আড়িয়াবাজার ক্যাম্পে সাদা পতাকা উড়ল। বগুড়ার তদানীস্তন প্রখ্যাত ডাক্তার টি আহমেদের কিশোর পুত্র মাসুদ এ লড়াইয়ে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। সাদা পতাকা দেখার সঙ্গে সঙ্গে মাসুদ সারেন্ডার, সারেন্ডার চিৎকার করা রাইফেল হাতে এগিয়ে এল। কিন্তু মুহূর্তে একটি গুলি মাসুদের মস্তিস্ক বিদীর্ণ করল। শহীদ হলে নির্ভীক এক বীর সেনানী। শেষ পর্যন্ত ক্যাম্প অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নুর ২৩ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করল। যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনী বন্দি সেনাদের এবং উদ্ধারকৃত ট্রাক ভর্তি অ্যামুনিশন বগুড়া শহরে নিয়ে যান। চব্বিশ জন পাকিস্তানী সৈন্য ও তাদের পরিবারবর্গ এবং মাসুদের লাশ সঙ্গে নিয়ে সবাই বগুড়া শহর প্রদক্ষিণ করল। বগুড়া জেলা প্রথমে সৈন্যদের পরিবারবর্গকে ঢোকানো হলো। রাতে একুশটি গান স্যালুটের মাধ্যমে শহীদ মাসুদকে কবরে সমাহিত করা হয়। তারপর ঘটে গেল এক দুঃখজনক ঘটনা। জন্তার ক্রুদ্ধ আক্রমণের হাত থেকে এদের রক্ষা করা যায়নি। তারা জেলখানার তালা ভাঙ্গা বন্দীদের বের করে এবং কুড়াল ও বাঁটি দিয়ে হত্যা করে। আড়িয়াবাজার ক্যাম্পে উদ্ধারকৃত দ্রব্যাদির মধ্যে কিছু চায়নিজ রাইফেল ও গুলি পাওয়া যায়। এছাড়া ৫৮ ট্রাকভর্তি অ্যামুনিশন পাওয়া যায় কিন্তু তা ব্যবহারযোগ্য ছিল না। অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, সেগুলো ছিল ১০৫ মি.মি এবং আর আর-এর অ্যামুনিশন।
[৫৬ সংকলন

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!