ইচাখালির যুদ্ধ-১, মেহেরপুর
মেহেরপুরের ইচাখালিতে মুক্তিবাহিনীর টহল দলের ওপর পাকসেনারা গুলিবর্ষণ করে ৬ জন দুপুরে। ৪ রাউন্ড ৩ ইঞ্চি মর্টার বোমা, ৪ রাউন্ড রিকয়েললেস রাইফেল শেল এবং প্রায় ১০০০ রাউন্ড ভারি মেশিনগানের গুলিবর্ষিত হয়। অপরপক্ষে মুক্তিবাহিনীও ১৬৮ রাউন্ড গুলি করে জবাব দেয়। ২/৩ জন পাকসেনার হতাহতের খবর পাওয়া যায়। পাকসেনার গুলিতে একজন সাধারণ মানুষ শহীদ হয়। নায়েক মতিনের নেতৃত্ব ১৫/২০ জন মুক্তিযোদ্ধা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মেহেরপুরের নাটুদা ক্যাম্প থেকে রতনপুর বাগোয়ান বল্লভপুর রাস্তা ধরে পাকসৈন্যর চলচাল বৃদ্ধি পাওয়ার হৃদয়পুর ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা তা ব্যাহত করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুযোগও এসে যায় জুন মাসের ১১ তারিখে। সেদিন বল্লভপুর সরস্বতী খালের পশ্চিমে কাঠের ব্রিজের বিপরীতে আনসারের ল্যান্স নায়েক, রহমতুল্লাহ খান সোনার ডিউটি। সঙ্গে আছে মফিউদ্দিন, রবিন, অস্থির আলী, সাদেক হোসেন, আব্দুর রশিদ, জমিরউদ্দীন, রায়হান উদ্দীন, আব্দুল বারিসহ মোট ১৫ জন। হাবিলদার মতিন পাটোয়ারী, আল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে মানিকনগর রাস্তার পাশে একটি পুকুরপাড়ে টহল দিচ্ছেন। এমন সময় রবিন এসে খবর দিল-বল্লভপুর সেগুনবাগানের মধ্যে বেশ কিছু পাকসৈন্য দেখা যাচ্ছে। মতিন পাটোয়ারী এবং আল আমিন অনতিদ্রুত রহমতুল্লাহ খানের ট্রেঞ্চে চলে আসেন। পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে সবাইকে বুঝিয়ে দেয়ার পর মতিন পাটোয়ারী পাকসেনাদের ওপর প্রথম আক্রমণ করেন। এরপর সবার অস্ত্র একযোগে গর্জে ওঠে। দু’ঘন্টা এক নাগাড়ে চলে গুলি বিনিময়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ যুদ্ধে ২০/২২ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। লাশগুলো পরে নাটুদা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর এতো বড় সাফল্যের ঘটনা এই প্রথম।
[১০৩] রফিকুর রশীদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত