You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.07 | মেজর ইফতেখার হায়দার শাহ্‌ ও তার সহযোগীদের গণহত্যা - সংগ্রামের নোটবুক

ইফতেখার হায়দার শাহ, মেজর (১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স)

স্থানঃ কুমিল্লা চাঁদপুর। অপরাধঃ মেজর ইফতেখার শাহ্‌র নেতৃত্বে পাকবাহিনী Kill&Burn অপারেশন চালিয়ে কুমিল্লা শহরের অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। সে মেজর রাঠোরের কাছে গর্ব করে ১২ জন সাধারণ হিন্দুকে হত্যার পর পোড়ানোর ঘটনা স্বীকার করে।
৭ এপ্রিলের পর চাঁদপুর পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। মেজর ইফতেখারের নেতৃত্বে ৭৮ থেকে ৯৬টি যানের বিরাট বহর কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর শহরে প্রবেশ করে টেননিক্যাল স্কুলে ঘাঁটি গেড়ে বসে। চাঁদপুর রেল স্টেশন এলাকা ও বিভিন্ন স্থানে এরা প্রায় পাঁচ হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। চাঁদপুর পুরান বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়সমূহে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী নির্যাতন ও অগ্নি সংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
১৫ এপ্রিল মেজর ইফতেখার ভৈরবের আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, পৌরসভার সহ সভাপতি মসলন্দ আলী এবং ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হাফিজ উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায়। ইফতেখার নিজ হাতে কলেজ ছাত্র লোকমান, সমাজকর্মী সাত্তার, স্কুলছাত্র সেলিম, ভিখারি আওয়াল, মুজিব বাহিনীর যোদ্ধা ফরহাদ ও আখতার আলীকে হত্যা করে। সে ভৈরব ব্রিজের নিকট রেলগাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে অসংখ্য যাত্রীকে বেয়নেট দিয়ে বুক চিরে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়। ১৫ মে ইফতেখার বাজিতপুর এবং নিকলী থানা ঘেরাও করে প্রায় দেড়শ’ জনকে ধরে আনে। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জন যুবতী মেয়ে ছিল যাঁদের ওপর নির্মমভাবে পাশবিক অত্যাচার করা হয়।
বারকুল গ্রামে ইফতেখার নির্দেশে পাকসেনারা ১২০ জন আবালবৃদ্ধ-বনিতাকে হত্যা এবং অনেক বালিকার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। ৪ মে গ্রামটিকে সে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়।
মেজর ইফতেখারের স্বীকারোক্তি থেকেই একটি নৃশংস ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। মেজর ইফতেখার বলে, ‘একদিন আমি দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ লোককে বন্দি করি। কিন্তু হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও সে নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে। আমার সন্দেহ হওয়ায় তাঁর লুঙ্গি খুলে পরীক্ষা করি এবং প্রমাণ করে যে সে হিন্দু। আই তৎক্ষণাৎ তাকে শেষ করতে তিনটি গুলি খরচ করি। প্রথম গুলিটি করি তার অণ্ডকোষে, দ্বিতীয় গুলিটি করি তার পেটে এবং সর্বশেষ গুলিটি করি মাথায়।
তার নেতৃত্বে কুমিল্লা পুলিশ লাইনে হামলা চালিয়ে বহু নিরস্ত্র বাঙালী পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া কুমিল্লা ও চাঁদপুরের অন্যান্য হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনসহ বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে সে অংশ নেয়।
মেজর ইফতেখার হায়দার শাহ্‌ ও তার সহযোগীদেরকে গণহত্যা, যুদ্ধপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা যায়।

[১৪] ডা. এম.এ. হাসান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত