আমির বাজারের যুদ্ধ, চাঁদপু্র
চাঁদপুরের আমির বাজারের যুদ্ধে আমরা ছিলাম। আমরা তিনটি গ্রুপে বিভকত হয়ে আমির বাজারের বাঁকে প্রস্তুত আছি। পরিকল্পনা অনযায়ী আমার গ্রুপ থেকে শুরু হলে প্রচণ্ড আক্রমণ। আমরা সবাই দুদিক থেকে সাড়াশির মত আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণের সামনে টিকতে না পেরে সমানের দু’টি লঞ্চ মতলব চলে যায়। পিছনের দু’টি গতি পরিবর্তন করা চাঁদপুরে চলে যায়। মাঝখানের একটি লঞ্চে গোলাগুলির মধ্যে কন্ট্রোল হারিয়ে আমাদের পাড়ে এসে থামে। আর একটি ঘুরে ঘুরে পাক খেতে খেতে আমি বাজারের উল্টা দিকে চরে গিয়ে আটকা পড়ে। অনেক অপেক্ষা করে যখন কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না তখন আমি আরো ৪ জনকে সাথে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতি সতর্কতার সাথে লাফিয়ে লঞ্চে উঠে আসি। আমি সবাইকে পজিশনে রেখে একটু সামনে এগিয়ে হাতিয়ার উঁচু করে চিৎকার দিয়ে বললাম সাবধান কেউ নড়বে না, নড়লেই গুলি করে মেরে ফেলব। হ্যান্ডস আপ হয়ে এক এক করে বের হয়ে আস। হঠাৎ দেখি হাত উঁচিয়ে একজন ভদ্রলোক বেরিয়ে আসছেন। রীতিমত অবাক হলাম ওনাকে দেখে। প্রথমে ভেবেছিলাম ভদ্রলোক মনির চৌধুরী। উনি জানালেন আমি মনির চৌধুরীর ছোট ভাই। এই লঞ্চে এরও বাঙালী ছিল। তাদের কাছ ছিল পাকবাহিনী ঔষধপত্র, বেতন ইত্যাদির কাজে সাহায্য করা। আমরা আহত অবস্থায় তিনজন পাক সৈনিককে পেলাম। আমি তাদের কাছ থেকে দুটি চাইনিজ রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করি। আমার লোকজন হাত পা বেঁধে পাকিস্তানী সৈনিকদের মেঘনা নদীতে ফেলে দিয়ে তাদের মনের ঝাল নিবারণ করে। লঞ্চের অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন বাঙালী মতলব সিয়াটোর কর্মী ছিল। আমি জনগণের সহায়তায় চরে আটকা পড়া লঞ্চটি নদীর এপাড়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি। তাতে আহত ও নিহত ১০/১২ জন রাজাকার ছিল। জনগণ জীবিত রাজাকারদের পিটিয়ে মেরে ফেলে। তাদের লাশ টেনে হেঁচড়ে নদীতে ফেলে দেয়। আমরা ৪ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে জীবত ধরতে সক্ষম হই। অন্যান্য বেসামরিক লোকদের মনির চৌধুরীর ভাইসহ ঢাকায় পাঠিয়ে দেই।
[৫০] ডা. মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত