You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.03 | আলফাপুর যুদ্ধ ১, ঝিনাইদহ - সংগ্রামের নোটবুক

আলফাপুর যুদ্ধ ১, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ জেলারে শৈলকূপা থানার অন্তর্গত আলফাপুর গ্রামে ’৭১ সালের ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে প্রায় ৫০ জন হানাদার মৃত্যুবরণ করে এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
আলফাপুর গ্রামটি শৈলাকূপা থানা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। গ্রামটি দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কুমারনদ। ’৭১ সালে এই নদ ছিল ভয়ানক খরস্রোতা। আলফাপুরেরে উল্টোদিকে অর্থ্যাৎ কুমারনদের দক্ষিণ পাড়ে শৈলকূপা থানার প্রায় শেষপ্রান্তে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত আবাইপুর গ্রামটি অবস্থিত।
সেপ্টেম্বর মাঝামাঝি সময়ে আলাইপুর রামসুন্দর হাইস্কুল এবং তৎসংলগ্ন গাঙ্গুটিয়া বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সাময়িক ক্যাম্পে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্প আক্রমণের জন্য ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে অবস্থানকারী খানসেনারা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এ খবর পৌঁছুলে তারা আবাইপুর থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে হাটফাজিলপুরের ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে ৩ টি দল প্রস্তুত রাখেন অপর দিকে মাগুরা বা শ্রীপুরের পাকিস্তানিদের প্রতিরোধ করার জন্য আকবর বাহিনী প্রস্তুত থাকে। এমতাবস্থায় ঝিনাইদহ এবং শৈলকূপা থেকে পাকিস্তানিরা ৩ আগস্ট গভীর রাতে কুমারনদের উত্তর পাড় দিয়ে এসে নৌকায় নদী পার হয়ে হাটফাজিলপুরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। কিন্তু তাদের বিশাল প্রস্তুতির কাছে মুক্তিযোদ্ধারা দুর্বল হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। আবাইপুর এসে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে আলফাপুরে চলে যায়। এদিকে পাকিস্তানীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি দল আবাইপুরের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প দখল করে এবং অন্য দলটি পুনরায় নদী পার হয়ে কামান্না স্কুলে অবস্থান নেয়। কামান্নায় অবস্থানকারী পাকিস্তানী দলটি পরদিন আলফাপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের জন্য অগ্রসর হয়। অন্যদিকে আবাইপুরের দলটি আকবর বাহিনীর বাধার মুখে কার্যত বন্দী হয়ে পড়ে। ফলে কামান্নার পাকিস্তানী দলটি অর্ধেক শক্তি নিয়ে অসহায় অবস্থায় আলফাপুরের পূর্ব সীমান্তে খাল পাড়ে প্রোটেক্টশন নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণের শিকার হয়। প্রায় ২ ঘন্টার যুদ্ধে এই পাকিস্তানী বাহিনীর অর্ধশতাধিক সৈন্যের প্রায় সবাই মারা যায়। জীবিত কয়েকজন পাকিস্তানী কোনমতে নদী পার হয়ে আবাইপুরে পৌঁছায়।
এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- রহমত আলী মন্টু, কামরুজ্জামান খসু, রান্নু, আযম, আব্দুস সাত্তার, কাজী আশরাফুল আলম, মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম, আবুবকর, মসলেম উদ্দিন, আব্দুল করিম, ছোট তোজাম্মেল, রশিদ, সরোয়ার, চাঁদ, রজব, সাজেদুর, মনোয়ার, আব্দুল বারীক, ফরিদ উদ্দিন, আসমত, মজনু, আমজাদ, গঞ্জের, লাড্ডু, রওশন, ভগাই চাঁদসহ আরও অনেকে।
বি এম রেজাউল করিম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ ষষ্ঠ খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত